জৌলুস হারাচ্ছে নিশ্চিন্তপুরের ঐতিহ্যবাহী হলুদহাটা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেন ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে বড় নিশ্চিন্তপুর হলুদ হাটা। দেশ স্বাধীনের আগেই প্রতিষ্ঠিত নিশ্চিন্তপুরের হলুদহাটা। এখনও এখানে ৬০টির বেশি হলুদের আড়ৎ রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি বড় হলুদের মিল রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে এই হলুদ হাটায়। আবহমান কাল থেকে সপ্তাহের দুই দিন সোমবার ও শুক্রবারে বসে এই হাট। বাকি ৫ দিনেও আড়তে চলে বেঁচাকেনা।

প্রতি বছরই সরকারি ভাবে হাট ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত সরকার পাচ্ছে রাজস্ব। ইজারার মেয়াদকাল থাকে চৈত্র মাসের ৩০ তারিখ থেকে পরবর্তি বছরের বৈশাখের ৩০ তারিখ পর্যন্ত।   দেশের অনেক দুর-দুরান্ত থেকে আসেন পাকারি ব্যবসায়ীরা। এই হলুদ যাচ্ছে সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, এবং উত্তর বঙ্গের নাটোর, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে এমনটিই জানালেন হলুদ হাটার আড়ৎদার তপন কুমার বাটুল।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর হাটে হলুদ বিক্রয় করতে আসা কৃষক সহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর আমার হলুদের ফলন ভালো, হাটে হলুদের দামও বেশ ভালো পেয়েছি। দেশি হলুদ প্রকার ভেদে প্রতি কেজি বাজার মূল্য ১৫০ থেকে ২২০, বিদেশি হলুদ প্রতি কেজি বাজার মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

হলুদ চাষি উপজেলার একতারপুর গ্রামের হায়দার আলী বলেন, চৈত্র মাস কন্দ (হলুদের কান্ড) লাগানোর উপযুক্ত সময়। সাধারণত ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগাতে হয়। ৫০ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২৫ সে.মি. দূরে দূরে ৫-৭ সে.মি. গভীরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়। কন্দ লাগানোর পর ভেলী (নালা) করে দিতে হয়।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের চাষিরা ব্যাপক পরিমাণে হলুদ চাষ করছেন। অল্প খরচে ও কম পরিচর্যায় বেশি ফলন পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এর চাষ করে থাকেন। এছাড়াও পুরো বছর জুড়েই এর চাহিদা রয়েছে। এই জেলায় চাষের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর হলুদের ফলন বেশি হয়েছে। আশানুরূপ ফলন ও বাজার ভাল হওয়ায় ঔষধীগুন সম্পন্ন ফসলের চাষ করতে আগ্রহী কৃষকরা।

স্থানীয় প্রবীন ব্যবসায়ী বয়বৃদ্ধ রতন মিয়া বলেন, হাট সংলগ্ন এলাকার শহর বর্ধিত হওয়ায় এবং নতুন নতুন ইমারত নির্মাণের কারণে হাটটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পুরাতন ঐতিহ্য হারাচ্ছে। আগে আমরা দেখেছি এই হলুদ হাটার রাস্তার দুই ধারে শতবর্ষী রেইনট্রি গাছের শীতল ছায়ায় বসে ব্যবসায়ীরা হলুদ বেঁচাকেনা করতেন। পরবর্তীতে পাকা দালান কোঠা নির্মাণ করে আড়ৎদারি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ওই সময়ে নির্মাণ করা বিল্ডিংগুলো হলুদের দালান বলেই পরিচিত ছিল। যা এখনও বহন করছে ঐতিহ্যবাহী হলুদ হাটার পরিচিতি।

হলুদ হাটার ব্যবসায়ীদের দাবি, হাটটির পুরাতন ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখে ব্যবসা পরিচালনা ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে হাটটির জৌলুস ফিরিয়েয়ানা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //