শেরপুরে হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতি ধরে রাখতে পুতুল নাচ

পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জাঁতাকলে পড়ে, ঘরে ঘরে অত্যাধুনিক মোবাইল হাতের নাগালে আসায় গ্রামবাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য পুতুল নাচ হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলার একদা প্রাচীন লোকসংস্কৃতির বিনোদন মাধ্যমগুলোর একটি হলো পুতুল নাচ, এক সময় লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিল। গ্রামবাংলার বিভিন্ন মেলা, উৎসবে বসতো এই পুতুল নাচ। তবে আজ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনের জগতে লুপ্ত হতে বসেছে বাংলার এই লোকসংস্কৃতি।

কবির কবিতায় কলমে ফুটে উঠত পুতুল নাচের ইতিকথা, যদিও তা আজ ইতিহাসে পরিণত হতে বসেছে। গ্রামবাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য পুতুল নাচের সংস্কৃতি ধরে রাখতে শেরপুর জেলা শহরের শ্যামলী পার্কে বিভিন্ন রাইডসের পাশাপাশি শিশুদের বাড়তি বিনোদন দিতে সংযুক্ত করা হয়েছে হারিয়ে যাওয়া সেই পুতুল নাচ। আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে শিশুরা যখন মোবাইলে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব খুলে সময় কাটাচ্ছে, মনের বিকাশ যেমন প্রতিহত হচ্ছে, শিশুমন মোবাইলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। ফলে মানসিক ও শারীরিক জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মন। ঠিক এসময় হারিয়ে যাওয়া পুতুল নাচের আসরে শৈশব কিশোর মনের বিকাশ ঘটানোর মূল লক্ষ্য নিয়ে শহরের অভিভাবকদেরও তাদের শিশুদের নিয়ে দেখা গেলো শ্যামলী পার্কের পুতুল নাচে।

শিশু তন্ময় ও রাকিব জানায়, আমরা আমাদের মা-বাবার মুখে পুতুল নাচের কথা শুনেছি এবং টিভিতে দেখেছিলাম একবার কিন্তু বাস্তবে এই প্রথম দেখলাম। খুব ভালো লেগেছে।

পরিবার-পরিজন নিয়ে পুতুল নাচ দেখতে আসা সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম এ পুতুল নাচ শেরপুরের এই শ্যামলী পার্কে চালু করায় খুশি হয়েছি। তাই আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তাদেরকে দেখাতে এসেছি। আমরা সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম কিন্তু আমার ছেলেমেয়েরা দেখেনি। তারা এ পুতুল নাচ দেখে খুবই এক্সসাইডেট হয়েছে।

জামালপুরের ‘রঞ্জু পুতুল নাচ’ দলের মাস্টার বা পরিচালক মো. বাদল মিয়া জানায়, এক সময় বিভিন্ন মেলা ও পার্বনে পুতুল নাচের প্রচলন থাকলেও এখন তা দেখা যায় না। এখন এই শিল্পের সঙ্গে কেউ আসতে চাইছে না। অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। মানুষও খুব একটা আগ্রহ দেখায় না আর লাভও নেই আগের মতো। তবে আমি আমার দলকে ধরে রেখেছি কেবল লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষায়।

সাবেক এমপি ফাতেমাতুজ্জোহুরা শ্যামলী নিজ উদ্যোগে শহরের ঢাকলহাটিতে শিশুদের জন্য বিনোদন দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত ‘শ্যামলী পার্কে’র পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ জানায়, বাংলার লোকসংস্কৃতি ধরে রাখতে মূলত তাদের এ প্রয়াস। আপাতত এক মাসের জন্য শো চালানো হলেও দর্শক সারা পেলে নিয়মিত চলবে এ পুতুল নাচ। আপাতত এক মাসের জন্য ৫০ টাকা মূল্যের টিকিট ধরা হয়েছে এবং ভিতরে চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত শো চালু থাকে। দর্শকদের আগ্রহের উপর এ পুতুল নাচ স্থায়ী করার ইচ্ছে রয়েছে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলার ঐহিত্য লোকসংস্কৃতির অংশ এই পুতুল নাচ যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য এ পুতুল নাচ ধরে রাখতে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় জেলার সচেতন মহল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //