‘বরিশালে ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো করতে চাচ্ছে’

জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, ২০১৮ সালে এ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি নগ্ন ভোট ছিনতাই, ভোট চুরির নাটক হয়েছিল। সেখানে ক্ষমতাসীন যে দল ছিল সেই দলই, যেই পরিবার ছিল সেই পরিবারই এবং যেই সরকার ছিল সেই সরকারেরই মানুষ ২০২৩ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের কার্যকলাপে আমার মনে হয়েছে যে, তারা ১২ জুনের নির্বাচনও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো করতে চাচ্ছে।

আজ রবিবার (১১ জুন) সকাল ১০টায় নগরের অক্সফোর্ড মিশন রোডের নিজ বাসভবন সংলগ্ন প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

প্রকৌশলী তাপস বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরিশালে এসে বলেছিলেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে কিন্তু এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো হয়নি। এখানে প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ওনারা বলেছিলেন নির্বাচনের দিন বরিশালে কোনো বহিরাগত থাকবে না, কিন্তু আমরা বারবার বলেছি বরিশালে বহিরাগতে ভরে গেছে। ওনারা বলেছিলেন ১১ জুন থেকে বরিশালে বহিরাগত থাকবে না, কিন্তু বাস্তবে দেখেছি নগরের সব হোটেল-মোটেলে রেস্তোরাঁগুলোতে এখনো বহিরাগতরা অবস্থান করছে, একজনও যায়নি। বিশেষ করে খুবই দুঃখজনক হলো দুটি গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচার করছে। তাদের সহায়তায় আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে ঘেরাও করে টাকা বিতরণ করছে। যাতে কেউ ওই বস্তির ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এসব বিষয় বার বার আপনাদের সামনে তুলে ধরলেও কোনো প্রতিকার আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সব আচরণবিধি ক্ষমতাসীনরা লঙ্ঘন করছে, গতরাতে তাদের আমরা দেখেছি মিছিল করতে। তারা বিশেষ প্রার্থীর ছবি ও প্রতীকী গেঞ্জিতে প্রিন্ট করে তা পরে মিছিল করেছে। এগুলো দেখার মানুষ নেই। সাদা পোশাকধারীরা আমাদের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, আমরা এখন শঙ্কিত হয়ে গেছি আজ রাতে আমাদের এজেন্টদের কতটুকু হুমকি-ধমকি দেবেন। গত পরশু আমাদের একজন ওয়ার্ড সেক্রেটারির বাসায় গিয়ে  হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে এবং সেন্টারে যেতে মানা করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের ভোটারদের কোনো অভিযোগই নির্বাচন কমিশন আমলে নিচ্ছে না, আমরা কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু একটি অভিযোগের উত্তর নির্বাচন কমিশন আমাদের দেয়নি। আবার আমি যে অভিযোগগুলো আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে করি সেগুলো ঢাকায় গিয়ে সেন্সরশিপ হয়ে যায়, অভিযোগগুলো ঠিকভাবে পত্রিকা এবং মিডিয়ায় আসেনি। নির্বাচনের যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সেটা একদম অনুপস্থিত।

তাপস বলেন, ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনে তাদের পক্ষে নেওয়ার জন্য অপচেষ্টা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, অশুভ তৎপরতা করছে তা জাতি মানতে পারছে না। আজ এ প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। গতকাল দেখেছি সরকারের একজন এমপি কীভাবে নির্বাচনের প্রচারণায় থাকে। বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ গতকাল বরিশাল শহরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমি অনুরোধ জানাচ্ছি যেসব আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বরিশালে রয়েছেন তারা যেন অবিলম্বে শহর ছেড়ে যান। যেসব এমপি, পাশের থানা-জেলা উপজেলার চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়ররাও যেন অবিলম্বে বরিশাল ত্যাগ করেন। আমি পুলিশ কমিশনারকেও এ বিষয়টি খেয়াল রাখার অনুরোধ করছি। না হলে নির্বাচন নিয়ে আমি খুবই শঙ্কিত, সুষ্ঠু হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছি আগামী জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে একটি ভালো নির্বাচন সবাই চায়। সারা বিশ্ব আমাদের দেখছে, এটি আমাদের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, সরকার নানান রকমের স্যাংশন ও স্যাংশনের হুমকি নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। এ নির্বাচন আগামী স্যাংশনকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজন বিশেষ প্রার্থীকে বাঁচানো কিংবা পাশ করার জন্য এ জাতির ওপর যেন অশুভ কাজ চাপিয়ে না দেওয়া হয়। আমি বিশ্বাস করতে চাই এখানে স্থানীয় প্রশাসনের অপতৎপরতা চলছে। তাই আমি সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে বলবো আমার অভিযোগ যেন আমলে নিয়ে আগামীকালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ায় সহায়তা করে। পাশাপাশি আমি বরিশালের ভোটারদের অনুরোধ জানাচ্ছি, যতই বাধা ও ষড়যন্ত্র থাকুক না কেন আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যদি প্রতিহত করে আপনারা প্রতিবাদ করবেন, আপনাদের সঙ্গে আমরা আছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //