সীমান্তে হাতি মানবের দ্বন্দ্বে বাড়ছে মৃত্যু আতঙ্ক

ময়মনসিংহ বিভাগের দুই জেলায় হাতি-মানবের দ্বন্দ্বে ২২ দিনের ব্যবধানে ছয়জনের প্রাণহানিসহ এক বন্য হাতির মৃত্যুতে সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফসল ও ঘরবাড়ি রক্ষার পাশাপাশি হাতি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন সাধারণ মানুষ।

পরিবেশবাদীরা বলছে, বনাঞ্চল রক্ষা না করলে হাতি-মানবের দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। হালুয়াঘাটের গাজীরভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ইউনিয়নে হাতির আক্রমণে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এভাবে আর কত দিন চলবে হাতি-মানবের দ্বন্দ্ব? সরকার দ্রুত সীমান্ত এলাকায় ফাঁদ বসিয়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবে এটাই আমার দাবি।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল হক বলেন, হাতি ঠেকাতে তার অংশে ইতোমধ্যে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ বসিয়েছেন। আরও কিছু কাজ চলছে। আরও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফাঁদ বসানো হলে অনেকটাই হাতি প্রবেশ বন্ধ করা যাবে।

হাতি-মানবের দ্বন্দ্বে প্রাণহানির ঘটনার উদ্বেগ জানিয়ে ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ থেকে নিরসনে উভয় দেশের সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বনায়ন বাড়াতে হবে। একটা সময় প্রচুর বনাঞ্চল ছিল। মানবজাতি সেগুলো ধ্বংস করার কারণে খাবার না পেয়ে হাতির পাল লোকালয়ে চলে আসছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ এই দীর্ঘ ৯ বছরে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন মানুষ। এই সময়ের মধ্যে মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩০টি হাতিও মারা গেছে। দুই হাজারের অধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

হাতি-মানবের দ্বন্দ্ব নিরসনে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, চার জেলার ১৬০ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত রয়েছে। 

এসব সীমান্তের করিডোর দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে শতাধিক বন্য হাতি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবেশরত রয়েছে। হাতির প্রবেশ বন্ধে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শেরপুরের ঝিনাইগাতি সীমান্তে ১৩ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে সংস্কার না করায় তা নষ্ট হয়ে পড়েছে। নতুনভাবে সেখানে ৮ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। 

গোপালপুরে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২৫ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করার পাশাপাশি সীমান্তে কাঁটাযুক্ত গাছ লাগানোর প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বন্য হাতির আক্রমণ অনেকটা কমে আসবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //