মারা যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি, দুশ্চিন্তায় চাষি

বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিক্রি উপযোগী হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা, ঘেরের গভীরতা না থাকা, পানির উৎসের সমস্যা, অক্সিজেন স্বল্পতা ও খাদ্য সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত গরম।

এদিকে মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি মারা যাওয়ায় আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। অনেকেই পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র মতে, খুলনা জেলায় ২০ হাজার ৪৩০টি বাগদা চাষের ঘের রয়েছে। যার মোট আয়তন ৩২ হাজার ৯৯৮ হেক্টর। সাতক্ষীরা জেলায় ৬৬ হাজার ৫৯৭টি বাগদা চাষের ঘের রয়েছে। যার মোট আয়তন ৭৮ হাজার ২৪০ হেক্টর।

চিংড়ি চাষিরা জানান, চলতি বছর উৎপাদনের শুরুতেই অধিকাংশ ঘেরের চিংড়ি মাছ মারা যাচ্ছে। মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে কিছু ব্যবহার করলেও চিংড়ি মৃত্যু বন্ধ হচ্ছে না। প্রথম দফার পুঁজি হারিয়ে ঋণ করে পরে চুনসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্য প্রয়োগ করে পোনা ছাড়লেও ঘেরের পরিবেশ তেমন ভালো অবস্থায় নেই। সেই মাছও মারা যাচ্ছে অনেকের।

খুলনার কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের চিংড়ি চাষি তৈয়েবুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করি। পোনা ছাড়ার ৩৭ দিন পর মাছ মরা শুরু হয়েছে।

বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, বর্তমানে বড় সমস্যা ৩৫ থেকে ৪৫ দিন বয়সের বাগদা মারা যাচ্ছে। এ বছর অধিকাংশ ঘেরের প্রথম দফার চিংড়ি দেড় ইঞ্চি সাইজের হওয়ার পর মারা গেছে। এখন কিছুটা ভালো থাকলেও মরা বন্ধ হয়নি। 

একবার কোনো ঘেরে বাগদা মরা শুরু করলে পার্শ্ববর্তী ঘেরগুলোও আক্রান্ত হয়। আর ঘেরের পরিবেশ ঠিক করতে প্রায় দুই থেকে তিন মাস লাগে। তবে দ্বিতীয় বার মারা গেলে চাষির ক্ষতির অন্ত থাকে না।

খুলনার কয়রার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুর হক বলেন, সম্প্রতি কোথাও কোথাও ইএমএস (আর্লি মর্টালিটি সিনড্রম) দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে মাছ মারা যায়। ভিব্রিও প্যারাহিমোলাইটিক্যাস ও ভিব্রিও হার্বি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে এটি দেখা দেয়। 

এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও সমস্যা হচ্ছে। এটি প্রতিরোধে ঘেরের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারপাশে নেট ব্যবহার করতে হবে। সব সময় ৩ থেকে ৫ ফুট পানি ধরে রাখতে অবশ্যই গভীরতা বাড়াতে হবে। এছাড়া ভাইরাসমুক্ত পিসিএফ পোনা ছাড়ার পাশাপাশি গুড অ্যাকোয়া কালচার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ঘেরগুলোয় পানির গভীরতা না থাকায় অতিরিক্ত গরমে পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অক্সিজেন ঘাটতি হচ্ছে। তবে ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যাম্পল টেস্ট করা হয়নি। পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব হবে না।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে ল্যাবে মৃত চিংড়ির নমুনা পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত প্রকৃত কারণ বলা যাবে না। তবে অতিরিক্ত গরমে পরিবেশগত সমস্যায় বাগদা মারা যাচ্ছে। এছাড়া রোগেও মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গভীরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //