গুমের শঙ্কায় মেয়র প্রার্থী

গুম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে বিএনপির সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।

আজ বুধবার (৩ মে) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জেলা কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ শঙ্কার কথা জানান।

এসময় মেয়র প্রার্থী রুপন বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, তার বিরুদ্ধেই দুদকের মামলা-হামলা হবে, নির্যাতন হবে। আমি গুমের আশঙ্কা করছি, আপনাদের সামনে আমার এটা হয়তো বা শেষ বক্তব্য। পরবর্তী পরিস্থিতি ভয়াবহ। কারণ চাপটা আমার ও আমার পরিবারের ওপর হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক চাপ না। এই মুহূর্তে এ নিয়ে বলাটাও আমার জন্য কষ্টকর হবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী সরাসরি মাঠে নেমেছেন, প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ তার জন্য কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ নেই। অপরদিকে আমার মতো একজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী দুদকের চাপে রয়েছে। যে তথ্য চেয়েছে তাতে আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখা হয়েছে।

রুপন বলেন, সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদক শুধু আমাকেই নয়, আমার মা ও বোনকেও তলব করেছে। তাদের পক্ষে একজন আসলেই হবে বিধায় আমি দুদক কার্যালয়ে এসেছি। এখানে আমার বাবা ও দাদার সময়কার সম্পত্তির হিসেব দিতে বলা হয়েছে। এটা কোন আইনে দিতে হবে আমি জানি না। আমি ২০০৪ সাল থেকে আয়কর দিয়ে আসছি। আমি যতটুকু পারছি দুদককে তথ্য দিয়েছি। আমার জন্মের আগে সম্পদের বিষয়ে আমার জানা নেই বলেও তাদের অবগত করেছি।

এই মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করেন, এই সরকার চাচ্ছে না ১৪ দল ব্যতীত কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ এতে তাদের জনপ্রিয়তার মানদণ্ড কি, সেটা জনসম্মুখে উন্মোচন হবে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পরিবারের সন্তান হিসেবে নিশ্চিন্তে বলতে চাই এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমার দল পাশে থাকবে। দেশ তথা বরিশালের জনগণ এর প্রতিবাদ করবে।

এসময় তিনি দাবি করেন, একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেনস্থা করার অংশ হিসেবেই এই দুদকে তলব কার্যক্রম চালিয়েছে। যাতে সঠিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে না পারি।

কামরুল আহসান রুপনের বক্তব্যের বিষয়ে দুদক বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কাইয়ুম হাওলাদার মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আহসান হাবিব কামালের দেওয়া সম্পদ বিবরণী তথ্যের কিছু বিষয় তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছিল। এর জন্যই তাকে ডাকা হয়েছিল এবং তদন্তের স্বার্থে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন হলে তিনি প্রথম ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে মেয়র হন কামাল। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুর্নীতির মামলায় তিনিসহ পাঁচজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

দীর্ঘদিন সাজাভোগের পরে ২০২১ সালের ১৫ জুন জামিনে মুক্ত হন আহসান হাবিব কামাল। এরপর ২০২১ সালের জুন মাসের শেষ দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এবারের আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার ছেলে কামরুল আহসান রুপন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।