ডলারের উচ্চমূল্যের পরও ২৫০ কোটি টাকা মুনাফা ওয়ালটনের

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও ভূ-রাজনৈতিক সংকটসহ নানান প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ওয়ালটনের ব্যবসায় সুবাতাস বইছে। ব্যাপক মুনাফায় রয়েছে পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২২ - মার্চ ২০২৩) কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। এ সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮.২৫ টাকা। কোম্পনিটির সর্বশেষ প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি.কে বড় অংকের মুনাফা বিসর্জন দিতে হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩৯২.৭৪ কোটি টাকা। যা পূর্বের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৪৪.১৮ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানির মোট আর্থিক ব্যয় হয়েছে ৬০৪.৭৯ কোটি টাকা, যা পূর্বের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১৪৯.৬০ কোটি টাকা। ফলে ওয়ালটনের ব্যবসায় সুবাতাস বইলেও কোম্পনির মুনাফার বড় অংশ গেছে ডলারের পেটে।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার ওমর ফারুক রিপন জানান, ডলারের দাম না বাড়লে এই সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা হতো প্রায় ৬২২ কোটি টাকা। আর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হতো প্রায় ২১ টাকা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের দাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় মূল্যে। গত এক বছরে দেশে ব্যাংক খাতে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় ওঠে। যার ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি বড় অংকের মুনাফা হারায়। অনেক কোম্পানি লোকসানে চলে যায়। কিন্তু নানান উদ্ভাবনী পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও মুনাফার ধারা ধরে রেখেছে ওয়ালটন হাই-টেক।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমাপ্ত সময়ে (তৃতীয় প্রান্তিক) ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) পুনর্মূল্যায়ন ব্যতীত দাঁড়িয়েছে ২২৪.৫৭ টাকা এবং পুনর্মূল্যায়নসহ ৩২৭.৮৪ টাকা। তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ৭৩.৭০ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫০.৪৯ গুণ বেশি। একই সঙ্গে ২০২২ সালের মার্চ সমাপনীর তুলনায় ২০২৩ সালের মার্চ সমাপনীতে মোট ব্যাংক ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির ঋণ হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, মজুদপণ্যের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং রিসিভেবলস্ এর উন্নতি করার সাথে কোম্পানির সকল খরচ এর উপর পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ফলে উল্লেখযোগ্য হারে নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকন্তু সরবরাহকারী ও অন্যান্যদের পেমেন্ট বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমায় ইতিবাচক এনওসিএফপিএস অর্জন সম্ভব হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু ওয়ালটন দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান, সেহেতু চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গরম এবং দুই ঈদে এ সময়ে দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি অনেকগুণ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় স্বস্তির সুবাতাস আনছে ওয়ালটন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //