কীর্তনখোলার তীরে ভাসছে শত শত তরমুজ

বরিশালের পোর্টরোড এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে পড়ে আছে শত শত পচা তরমুজ। যা এখন গবাদি পশুর খাবারে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বড় লোকসান এড়াতে বাজারে অপরিপক্ব তরমুজ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে পানির দামে।

পোর্টরোড সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী এবং জেলখালের প্রবেশ মুখে দেখা গেছে, হাজার হাজার পিস বড়-ছোট আকারের তরমুজ পানিতে ভাসছে। ফেলে দেয়া তরমুজের স্তূপ জমে আছে নদীর তীরে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এসব তরমুজ ওপর থেকে ভালো দেখালেও ভেতরে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে এসব তরমুজ মোকামে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার চাষিরা।

মোকামের আড়তদাররা জানিয়েছেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বরগুনা ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকায় ভেতরে পচন ধরেছে তরমুজগুলো। চাষিরা এসব তরমুজ বরিশালে নিয়ে আসার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে তরমুজগুলো পচে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।

বরিশাল নগরীর সর্ববৃহৎ পোর্টরোডের ফলের আড়তে দেখা গেছে, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা থেকে তরমুজবাহী ট্রলার আসছে মোকামে। এখান থেকেই ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মোকামে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ভোলার চরফ্যাশনের কৃষক সাহেব আলী জানান, তার দুই একর জমিতে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা ছিল ভালো লাভ হবে। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে সেই আশা নিরাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নগরীর কলাপট্টির পাইকারি ফল বিক্রেতা মো. জীবন বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে তরমুজ ক্ষেতে পানি জমে গেছে। তাই পরিপক্বতার আগেই তরমুজ কেটে বাজারে নিয়ে আসছে চাষিরা। এতে কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে দামও কমে গেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের একশো পিস তরমুজের পাইকারি দাম ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি পিস তরমুজের দাম দাঁড়ায় ১৩০ টাকা।


এছাড়া প্রতি একশত পিস ছোট আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে চার হাজার টাকায়। মাত্র কয়েকদিন আগেও ছোট আকারের এই তরমুজগুলো প্রতি একশত পিস সর্বনিম্ন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এখন ছোট আকারের যে তরমুজগুলো বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগই অপরিপক্ব। ভেতরে তেমন লাল হয়নি এবং স্বাদও ভালো নয়।

বরিশাল কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ অঞ্চলের প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে অন্তত ২৭ লাখ টন তরমুজের ফলন হয়েছে। ভালো ফলনে কৃষকদের লাভ হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সব শেষ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্যান বিশেষজ্ঞ জিএমএম কবীর খান বলেন, শিলার আঘাতে তরমুজে পচন ধরে। কারণ, ক্ষেতের নালাগুলোতে কীটনাশকসহ সার দেয়া থাকে। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো এক হয়ে গাছের ওপর অতিমাত্রায় প্রভাব ফেলার কারণে গাছ যেমন মরে যাচ্ছে, তেমনি তরমুজেও পচন ধরছে। এই মুহূর্তে রোদ উঠলে পচন কিছুটা রোধ হতে পারে বলে জানান এই কৃষি বিশেষজ্ঞ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //