একাকীত্ব ঘোচাতে ৭০ বছরে বিয়ে: শওকত আলী

একাকীত্ব ঘোচাতে ৭০ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক হাওলাদার শওকত আলী।

গত শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী এলাকার ৩৫ বছর বয়সী শাহেদা বেগম নাজুকে বিয়ে করেন তিনি। নিজ বাড়িতে জাকজমকপূর্ণভাবে পরিবারের সম্মতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। হাওলাদার শওকত আলীর আবদারে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়ের পক্ষের লোকজন আসেন শওকত আলীর বাড়িতে। আলোচিত এই বিয়েতে খুশি হাওলাদার শওকত আলী-শাহেদা বেগম নাজু।

হাওলাদার শওকত আলী ১৯৫৪ সালে রামপাল উপজেলার জিগিরমোল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। স্থানীয় স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে খুলনা বিএল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্বর সম্পন্ন করেন। পরে রামপাল ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকুরী জীবন শুরু করেন। সংসারে অভাব-অনাটন থাকায় ভাই-বোনদের পড়াশুনাসহ সংসারের বেশিরভাগ দায়িত্ব পরে শওকত আলীর উপর। চাকরির পাশাপাশি আয় বৃদ্ধির জন্য ১৯৯৩ সালে নিজ বাড়ি ছেড়ে হুড়কা এলাকায় চিংড়ি চাষ শুরু করেন শওকত। পরবর্তীতে জমি কিনে হুড়কাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ভাই-বোনদের পাশাপাশি স্থানীয় দুই শতাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে নিজ ব্যয়ে পড়াশুনা করিয়েছেন তিনি। ভাই-বোনদের দায়িত্ব, সমাজ সেবা ও স্বাধীনতা হারানোর ভয়ে সময়মত বিয়ে করা হয়নি এই গুনি মানুষের। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান শওকত আলী। বৃদ্ধ ভাইকে দেখাশুনা করার জন্য ছোটবোন নার্গিস আক্তার ঝর্না একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন ভাইয়ের বাড়িতে। তারপরও জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে নিজেকে বড় একা মনে হতে থাকে শওকত আলীর। এই একাকীত্ব ঘোচাতেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।


হাওলাদার শওকত আলী বলেন, জীবনের শুরু থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। ভাই-বোন ও এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। যার কারণে বিয়েতো দূরের কথা নিজের করা জমিতে একটি ভবনও করিনি। আল্লাহ আমার আশা পূরণ করেছেন। আমার সব ভাইবোনরা শিক্ষিত হয়েছেন। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ভাই-বোনদের পাশাপাশি এলাকার অনেককে পড়াশুনার খরচ দিয়েছি। তারাও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে চাকরি করছেন দেশে-বিদেশে। হুড়কার মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমার নিজস্ব জমি ও মৎস্য ঘের রয়েছে। সবকিছুতেই নিজেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে হত। স্বজনদের চাপ থাকলেও বিয়ে ভাই-বোনদের দায়িত্ব ও স্বাধীনতা হারানোর ভয়ে বিয়ে করিনি। কিন্তু শেষ বয়সে এসে নিজেকে খুব একা মনে হতে থাকে। যার কারণে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই। এতে পরিবারের সবাই খুবই খুশি হয়। পরবর্তীতে সবার সম্মতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, এখন কেমন আছেন এমন প্রশ্নে হাওলাদার শওকত আলী বলেন, খুবই ভাল আছি। বিয়ের পরে এখনো শ্বশুর বাড়িতে যাইনি। তবে স্ত্রীকে নিয়ে নদীতে স্পিডবোটসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। শ্বশুরবাড়ি যাব একটু সময়, সুযোগ হলে। সর্বপরী সবকিছু জেনেই নাজু আমাকে বিয়ে করেছে। আমিও নাজুকে আপন করে নিয়েছে। বাকিটা সময় এক সাথে কাটাতে চাই।

তিনি আরো বলেন, বিয়ে না করা কোন যৌক্তিক কাজ হতে পারে না। সবার উচিত বিয়ে করা। বিয়ে করার ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক ও শারীরিক গুরুত্ব অনেক। জীবনের ঝামেলার জন্য সময়মত না হলেও, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করার পরামর্শ দেন তিনি।

নববধূ শাহেদা বেগম নাজু বলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হিসেবে আমি এই বিয়েতে অনেক খুশি। সবার কাছে দোয়া চাই, বাকি জীবন যেন সুখ-শান্তিকে কাটাতে পারি।


নববধূ শাহেদা বেগম নাজু বেগম নাজুর এর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেখানে একটি মেয়ে আছে তার। এই মেয়েরও দায়িত্ব নিয়েছেন হাওলাদার শওকত আলী।

হাওলাদার শওকত আলীর নিকটাত্মীয় আব্দুল হালিম খোকন বলেন, তিনি আমাদের বড় ভাই, আমরা তার কাছে মানুষ হয়েছি, সারাটা জীবন সে আমাদের সুখ-দুঃখে বটবৃক্ষের মতো আগলে রেখেছেন। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তিনি রাজি হননি। সবশেষে আমাদের অনুরোধ ও তার সম্মতিতে এই বিয়ে হয়েছে। সবাই আমাদের ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।

হাওলাদার শওকত আলীর বোন নার্গিস আক্তার ঝর্না বলেন, ভাইয়ার দেখাশুনা করার জন্য ছেলেকে নিয়ে তার বাড়িতে থাকি। ভাই-বোনরা সব সময় চাইতাম, ভাইয়ার একটা সংসার হোক সে সুখে শান্তিতে থাকুক। আমাদের জন্য তো অনেক করেছেন। শেষ বয়সে এসে ভাইয়া বিয়ে করেছেন এজন্য আমরা সবাই খুশি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //