জামালপুরের একমাত্র জীবিত ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কায়েস উদ্দিন (৯৬)। জেলাজুড়ে যিনি সবার কাছে কায়েস ভাই নামে পরিচিত। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। কানেও কম শোনেন, চোখেও দেখেন না আগের মতো। তবে চিন্তা-চেতনায় এখনো অবিচল ও আপসহীন। আজীবন অভাবগ্রস্ত ও চিরকুমার থাকলেও তিনি গ্রহণ করেননি সরকারি কোনো সহযোগিতা। শুধু তার স্বপ্ন মৃত্যুর আগে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখে যেতে চান।
জামালপুর শহরের বেলটিয়া গ্রামের মৃত ছইম উদ্দিন সরকারের ছেলে কয়েস উদ্দিন। বর্তমানে তিনি জামালপুর সদরের গেটপাড় এলাকায় একটি পরিত্যক্ত দোকানে একা থাকেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স ৯৬ হলেও বর্তমান বয়স ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, যৌবনে রাজনীতিতে দৃঢ়ভাবে সক্রিয় থাকায় বিয়েও করেননি তিনি। ছিলেন রাজনৈতিক নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী।
কয়েস উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতে পেরেছিলেন, দারিদ্র্যের জন্য এরপর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, ৪৭-এর দেশ বিভক্তির পর এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে তার সরাসরি অংশগ্রহণ। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের অবিচার, শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে অনেক গান রচনা করেন তিনি। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে তিনি যোগ দেন সেখানে। তৈয়ব আলী, তাছির মোক্তার, মোয়াজ্জেম উকিল, হায়দর আলী মল্লিক, নাসির সরকারসহ তার সমসাময়িক লোকদের সঙ্গে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলন করেন। কয়েস উদ্দিন ভাষা আন্দোলনের পক্ষে লেখা ও গাওয়া গান-কবিতার মাধ্যমে বাঙালিদের অনুপ্রাণিত করতেন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে গান রচনা করায় তাকে এক বছরের জন্য জেলে যেতে হয়েছিল।
কয়েস উদ্দিন জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাড়িতে পাকিস্তানি সেনারা আগুন দেয়। এতে তার রচিত সমস্ত গান-কবিতাও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। জীবদ্দশায় তিনি সরকারের কাছে কোনো সহযোগিতা বা স্বীকৃতি চাননি। অভাব তার পিছু না ছাড়লেও কারও কাছে হাত পাততে চান না তিনি। তার স্বপ্ন, শুধু মৃত্যুর আগে দুর্নীতিমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ দেখে যেতে চান।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, প্রশাসন থেকে ভাষাসৈনিক কয়েস উদ্দিনকে কয়েকবার সাহায্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য নিতে রাজি হননি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh