ভিডিও দেখে শনাক্ত ১৫ জঙ্গির বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কথিত সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীকে গত ২৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এসময় তার মুঠোফোনে অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও খুঁজে পান তারা।

ভিডিও দেখে এখন পর্যন্ত ৩২ জঙ্গি সদস্যের নাম-পরিচয় এবং ঠিকানা শনাক্ত করেছে র‌্যাব। যাদের মধ্যে ১৫ জনের বাড়িই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যের বাড়িই পটুয়াখালী জেলায়।

এরা হলেন- বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ এলাকার বাসিন্দা রাক্কী আব্দুস সালাম ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল (২৮), সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের ঝরঝরিয়াতলা এলাকার মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেন (২৬), বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশীবপুরের ভবানীপুর গ্রামের মো. মাহমুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০)।

এছাড়া পটুয়াখালী জেলার সদর থানাধিন লাউকাঠি গ্রামের মো. আল আমিন ফকির ওরফে মোস্তাক (১৯), মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ (২৬), পটুয়াখালীর দশমিনা থানাধিন মধ্য গছানিয়া গ্রামের মো. শামীম মিয়া ওরফে আবু হুরায়রা ওরফে রাফি ওরফে চামদুর (২৫), একই থানার উত্তর লক্ষ্মীপুর দফিপুর গ্রামের মো. হোসাইন আহমদ ওরফে রেকমি ওরফে প্যাদা (২১), মহিপুর থানাধিন মহিপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ সাকিব ওরফে শান্ত (২০) ও মির্জাগঞ্জ থানাধিন সুবিধখালী গ্রামের জুয়েল মাহমুদ (২৭)।

বরগুনা জেলা সদরের বুরা মজুমদার এলাকার মো. সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), ঝালকাঠি জেলা সদর থানার বাউকাঠি কালিকান্দা এলাকার মো. হাবিবুর রহমান ওরফে মুরা (২৩), নলছিটি উপজেলার নাচনমহল গ্রামের মিলন তালুকদার ওরফে লামজল।

এছাড়াও ফরিদপুরের চড় ভদ্রাশন থানাধিন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মো. আবু জাফর পিন্টু ওরফে তাহান (৪৩), একই জেলার বোয়ালমারি থানাধিন মহনপুর গ্রামের মো. জাকারিয়া ওরফে ফিরুক (২৬) এবং মাদারীপুর সদর থানার কালিকাপুর গ্রামের মো. ইয়াছিন আরিফ (২১) ও একই জেলার রাজৈর থানাধিন স্বরমঙ্গল গ্রামের আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম ওরফে কয়।

এদিকে র‌্যাব বলছে, শুধু এই ১৫ জনই নয়, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে এই অঞ্চলের আরো প্রায় ২৫ জনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছেন তারা। এদের বিষয়ে আরো গভীর তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান।

তিনি বলেছেন, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে তারা বিভিন্ন সময় পৃথকস্থান থেকে নিখোঁজ হয়েছে। তাদের কারোর নিখোঁজের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়নি।

এরা কাদের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে পৌঁছাল এবং কারা এদের অর্থ সরবরাহকারী তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। খুব শিঘ্রই এদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্তদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, নাম-পরিচয় শনাক্তের পরে আমরা জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পরিবারের সদস্য অর্থাৎ বাবা-মা এবং ভাই-বোনদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে র‌্যাব-৮ সদস্য দপ্তরে ডেকে আনা হয়েছে। তাদের সাথে কথা হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা আমাদেরকে জানিয়েছে, বিভিন্ন সময় তাদের সন্তানরা নিখোঁজ এবং বাড়ি থেকে চলে গেছে। অনেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। আবার অনেকে সন্তান একাই ফিরে আসবে বলে অপেক্ষায় থেকে আইনের সহযোগিতা নেয়নি। এখন তারা যখন জানতে পেরেছে তাদের সন্তানরা বিপথে পা বাড়িয়েছে তখন তারা সামাজিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা জড়িতদের পরিবারের সাথে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে এদের সন্তানদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এই ভুল পথে টেনে নেয়া হয়েছে। তবে এরা কেউ সংঘবদ্ধভাবে যায়নি। তারা আলাদাভাবেই গিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ লেখাপড়া করতো, কেউ ব্যবসা বাণিজ্য বা চাকরি করতো।

কর্নেল মাহামুদুল হাসান বলেন, মূলত করোনাকালিন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বেশি সময় কাটিয়েছে মানুষ। সেসময়েই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ পান অভিযুক্তরা। সেখান থেকে তাদেরকে নানাভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করা হয়েছে।

তবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিরাও রয়েছে। যারা এসব যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদেরকে জঙ্গি সংগঠনে সম্পৃক্ত করেন। অর্থের যোগান দেয়। আমরা এদেরও সন্ধান করছি। আশা রাখছি খুব শিঘ্রই এদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ভোলার একটি দীপে জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে পায় র‌্যাব-৮। এর পরপরই সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করে জঙ্গি সংগঠনটি। সেখানে সুসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। কিন্তু র‌্যাবের উপস্থিতির কারণে সেখান থেকে সটকে পরে জঙ্গিরা। র‌্যাব ধারনা করছে ভোলার দীপের সেই জঙ্গিরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহারে অবস্থান নিয়েছিল। সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল।

র‌্যাব-৮ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামের নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নিজেদেরকে আত্মপ্রকাশ করার জন্য। তারা বড়ধনের কোন নাশকতার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিল। তবে বরিশাল অঞ্চলে জঙ্গিদের হানা দেয়ার কোন শঙ্কা নেই। এমনকি এই অঞ্চল থেকেই যে জঙ্গি সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে সেটাও না। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে তিনটি অঞ্চল থেকে সদস্য সংগ্রহ করছিল।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অন্তত ২৫ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছি। যাদের সবার বাড়িই বরিশাল অঞ্চলে। আপাতত তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। তাদের বিষয়ে আরো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুরোটা নিশ্চিত হয়েই সন্দেহের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশনে যাবো।

তবে ভিডিও দেখে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কাজ করছে র‌্যাব-৮। এমনকি ভবিষ্যতেও করবে। এজন্য আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত টহল এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা চলমান রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //