দক্ষিণাঞ্চলে ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ অঞ্চলের প্রায় সাত লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এই পরিমাণ জমিতে ২০ লক্ষাধিক মেট্রিক টন আমন উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

উৎপাদনের অনুকূলে সরকারিভাবে বিভাগের ছয় জেলা থেকে মাত্র ৪৮ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন আমন ধান এবং চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও শঙ্কিত খাদ্য বিভাগ।

তারা বলছেন, সরকার যে মূল্যে ধান-চাল সংগ্রহ করছে তার থেকে বাজার দর অনেক বেশি। যে কারণে কৃষকের সরাসরি বাজারে পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। তবে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এবার আমনের পাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনের পাশাপাশি কৃষককে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।

খাদ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া চাহিদাপত্র অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে ১৭ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩০ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। এ জন্য ধানের প্রতি কেজির মূল্য ২৮ টাকা এবং চালের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ৪২ টাকা। যা বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ধানের মূল্য প্রকার ভেদে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাচ্ছে কৃষকরা। এছাড়া প্রতি কেজি চালের মূল্য পাচ্ছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে বরিশাল বিভাগে আমন ধান সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। যা শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে আসলেও সংগ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে না।

খাদ্য বিভাগের সবশেষ ২৯ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে ১৮ মেট্রিক টন ধান এবং ছয় জেলার ১২টি উপজেলা থেকে এক হাজার ৯৩৩ দশমিক ১৭০ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করেছে খাদ্য বিভাগ।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হতে এখনো ১৫ হাজার ৯৬৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩০ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করতে হবে খাদ্য বিভাগকে।

বরিশালের মুলাদী উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এবার প্রায় চার একর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করেছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ ভাগ জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছে। এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৪০ মণ ধান পেয়েছি।

তিনি বলেন, পূর্বে বাজার মূল্য কম থাকায় খাদ্য বিভাগের কাছে চাল বিক্রি করতে হতো। কিন্তু যে পরিমাণ উৎপাদন হতো তার একাংশ বিক্রি করতে পারতাম না। তার ওপর সরকারিভাবে চাল বিক্রি করতে লটারিতে অংশ নিতে হয়েছে। এটা অনেক ঝামেলার। কিন্তু এবার সরকারিভাবে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার থেকে বাজার মূল্য বেশি। তাই প্রথম চালান ধান বাজারেই বিক্রি করেছি। লাভও হয়েছে বেশি।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। এ কারণেই একটি মূল্য নির্ধারণ করে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় করা হয় কৃষক এবং মিল মালিকদের কাছ থেকে। আর যাই হোক বাজারে সরকারি মূল্যের কমে বিক্রি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এবার সরকারি মূল্যের থেকে বাজারে আমন ধান এবং চালের মূল্য অনেক বেশি। তার ওপর খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রি করতে হলে অবশ্যই চিটা ছাড়া পরিষ্কার ধান বিক্রি করতে হব। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে গেলে সেই ঝামেলা আর থাকে না। যার কারণে কৃষকরা এবার সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রি না করে বাজারে বিক্রি করছে। এতে তারা ভালো মূল্যও পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //