করোনা মুক্তির বছরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভাইরাসটি সারাদেশের ন্যায় বরিশাল বিভাগেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। তবে বিদায়ী ২০২২ সাল করোনা মুক্তির বছর বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা শনাক্তের দৈনিক হার শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে।

তবে বিদায়ী বছরটিতে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে ডেঙ্গু জ্বর ও ডায়রিয়া। গত এক বছরে এই দুটি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে এক লাখ মানুষ। আর মৃত্যু বরণ করেছেন ২৮ জন। যদিও বছরের শেষভাগে তাও এখন নিয়ন্ত্রণে। এমনটিই জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ১১ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন বছরে বিভাগের ছয় জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ২৪৭ জন। এসময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৬৯৩ জনের। তাছাড়া সুস্থতা লাভ করেছেন ৫৩ হাজার ১৭৬ জন।

এর বিপরীতে বিদায়ী ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক বছরে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৯২ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এক বছরে মোট আক্রান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৭১৬ জন। সে হিসেবে বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ১৭৬ জন। অন্যান্য বছরগুলোর ন্যায় বিদায়ী বছরেও আক্রান্তের হারে শীর্ষ স্থানে রয়েছে বরিশাল জেলা।

বর্তমানে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা শূণ্যের কোটায় রয়েছে। সবশেষ ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এ.এস.এম. আহসান কবির জানান, বিদায়ী বছরটি করোনা মুক্তির বছর হলেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বর। বিদায়ী বছরে বিভাগের ছয়টি জেলায় ৭১ হাজার ৪০৭ জন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এসময় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন।

বিভাগের মধ্যে সব থেকে বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ভোলা জেলায়। এই জেলায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৫৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিরোজপুর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৭০৯ জন। সর্বনিম্ন ৬ হাজার ৪০৩ জন আক্রান্ত হয়েছে ঝালকাঠি জেলায়।

বিভাগের ৪২টি উপজেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করেছে ৪১০টি মেডিকেল টিম। তবে বছরের শেষভাগে এসে ডায়রিয়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গেলো ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি।

অপরদিকে, বিদায়ী বছরে এ বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৩০ জন। এসময় ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থতা লাভ করেছেন ৩ হাজার ১৩০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের শীর্ষ ছিল পিরোজপুর এবং বরগুনা জেলা। দুটি জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৩৩ জন এবং ৪৭২ জন। এমনকি সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় যে চারজন নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে পিরোজপুরের একজন এবং বরগুনার তিনজন। বছরজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের তালিকায় সবার শেষে থাকা ঝালকাঠি জেলায় ১১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়া বরিশাল জেলায় ৩৭৭ জন, পটুয়াখালী জেলায় ২৯৩ জন এবং ভোলা জেলায় ২৪৬ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ১১৯ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আক্রান্ত যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে তারাও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, ২০২২ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনা মুক্তির বছর। তবে করোনার নতুন যে ধরণটি বর্তমানে বহির্বিশ্বে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে তা থেকে আমাদের দেশকে রক্তা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। অবশ্যই কোভিড নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা মুক্তির বছরের মাঝামাঝি এবং শেষ দিকে ডায়রিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছিল। এ দুটি রোগই সিজনাল সমস্যা। গরমের সময় ডায়রিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এসময় বিষুদ্ধ পানির অভাবে নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদ এমনকি শহরকেন্দ্রিক ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়।

তাছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, এডিস্ মশা মূলত জমে থাকা পরিচ্ছন্ন পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই বাড়ির আঙ্গিনা বা গৃহে পানি বেশি সময় জমিয়ে রাখা যাবে না। আর ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা জরুরি।

এসব নিয়ম মেনে চলছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি বিষুদ্ধ পানি এবং বাইরের খাবার থেকে বিরত থাকলে ডায়রিয়া থেকেও রক্ষাপাওয়া যাবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //