টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে টেন্ডার সিন্ডিকেটের অভিযোগ

টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে টেন্ডার সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। সিন্ডিকেটের তৎপরতা আর অফিস কৌশলে জেলা সড়ক বিভাগের নিয়মিত ঠিকাদাররা প্রতিনিয়তই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেও কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সম্প্রতি সড়ক বিভাগের সাপ্লাইয়ের একটি প্যাকেজ কাজে সর্বনিম্ন দরদাতাকে রেট এনালাইসিস নামের অফিস কৌশলের ফাঁদে ফেলে বেশি দরে কাজটি সিন্ডিকেটের সদস্যদের দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ঠিকাদাররা, তেমনি কাজে সরকারের বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা।

সড়ক ভবন অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় লাইসেন্স সংখ্যা মোট ২৮৪টি। এর মধ্যে গত বছরের ২৭০টি লাইসেন্সসহ নতুন লাইসেন্স রয়েছে ১৪টি। সড়ক বিভাগের স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেন যোগদানের পর থেকেই শুরু হয়েছে টেন্ডার সিন্ডিকেট। সৃষ্ট ওই সিন্ডিকেটের কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন নিয়মিত টেন্ডারে কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা। টেন্ডার বঞ্চনায় রেট এনালাইসিসসহ নানা ধরণের ভুল নির্ণয়ের কৌশল অবলম্বন করছেন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। এর সুবিধা ভোগ করছেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সিন্ডিকেট সদস্য ঠিকাদাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সৃষ্টি সিন্ডিকেটের উল্লেখযোগ্য ঠিকাদাররা হলেন- ভূঞাপুর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের ঠিকাদার লিটন, এমদাদুল হক সুমন, মিঠু, বাবলু, মঞ্জু, মোস্তফা, মনজ, রুহুল আমিন, রিপন গংরা।

মারর্স এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মিঠু মিয়া বলেন, সড়ক বিভাগের পাথর, ইট ও বালু সাপ্লাই কাজের ২৯ লাখ টাকা একটি কাজ আমি পেয়েছি। তবে কত ভাগ বেশি দিয়ে কাজটি পেয়েছি তা কাগজ দেখে বলতে হবে।

ওই প্যাকেজের ২৫ লাখ টাকার সাপ্লাইয়ের কাজ পাওয়া আরেক ঠিকাদার ও ফ্লোরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী এমদাদুল হক সুমনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

সর্বনিম্ন দরদাতা ও টেন্ডার বঞ্চিত মেসার্স নাবিলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মো. আকিলুর রহমান বলেন, আমি সড়ক বিভাগের নিয়মিত ঠিকাদার। সম্প্রতি দপ্তরের ২৯ ও ২৫ লাখ টাকাসহ মোট ৫৪ লাখ টাকার পাথর, ইট ও বালু সাপ্লাইয়ের একটি প্যাকেজ টেন্ডারে কক্সবাজারের মালিকাধীন আসিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে আমি অংশগ্রহণ করি। কাজটির সর্বনিম্ন দরদাতাও হই আমি। তবে নিয়মের বাইরে কাজটির রেট এনালাইসিস চেয়ে আমাকে কাজ পেতে অসহযোগিতা করেছেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। আমাকে তাদের অনিয়মে বেড়াজালে আটকে বেশি দরদাতা ঠিকাদারদের কাজটি দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের নামে এভাবে টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যোগদানের পরই নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। সিন্ডিকেটে কাজ বন্টন করে মোটা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এ কারণে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেও কাজ পাচ্ছেন না জেলার সাধারণ ঠিকাদাররা।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (এসিট্যান্ট ইঞ্জি. অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আশরাফুল ইসলাম।

তিনি জানান, ইজিবির মাধ্যমে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে অফিস কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরো জানান, ৫৪ লাখ টাকার সাপ্লাইয়ের একটি প্যাকেজ টেন্ডারে কক্সবাজারের আসিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন। ওই টেন্ডারে তারা সাড়ে ২৩ ভাগ লেস দেন। নির্ধারিত রেটের বিপরীতে কেন তারা এত কম টাকা রেট দিল এ কারণে তাদের রেট এনালাইসিস পত্র চাওয়া হয়েছিল। তারা সেটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কাজ দুটি অন্য ঠিকাদাররা পেয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //