ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ০১:০৯ পিএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দুইগ্রামের কৃষি জমি ও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার। অবৈধ ডেজার ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী বাধা দিলেও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, এর আগেও প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে একাধিকবার বন্ধ করলেও সম্প্রতি তারা আবারও অন্তত ছয়টি ড্রেজার স্থাপন করে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এই বিষয়ে পুনরায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুক্তভোগী ১৯জন কৃষি জমির মালিক সাক্ষরিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন জানিয়েছেন।
সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর ও ঘাটিয়ারা এলাকার কৃষি জমি এবং পুকুর থেকে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী একটি চক্র। অভিযোগ উঠেছে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঘাটিয়ারা গ্রামের নুরু মীরের তিন ছেলে মইনুল মীর ওরফে মনির মিয়া, দেলোয়ার মিয়া ও কামাল মীর। এই তিন ভাইয়ের সাথে রয়েছেন চিনাইর ও চাপুইর এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তলদেশ থেকে মাটি সরে গিয়ে আশপাশের বাড়িঘর, কৃষি জমি ও পুকুর হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি ভাঙন দেখা দিয়েছে পুকুর পাড়ে। এছাড়াও হুমকির মুখে পড়েছে সিলেট থেকে চট্রগ্রামের দিকে যাওয়া জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বড় টাওয়ার। এসব বিষয় উল্লেখ করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রামবাসী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ কিন্তু সম্প্রতি একই চক্র পুকুর ও জমিতে ড্রেজার স্থাপন করে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এতে করে পুনরায় আশপাশের কৃষি জমি, পুকুর, বাড়িঘর ও জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক টাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে ১৯জন কৃষি জমির মালিক সাক্ষরিত পুনরায় একটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর করা হয়েছে।
অভিযোগকারীদের মধ্যে খলিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর যাবত মনির মিয়ার নেতৃত্বে কৃষি জমি ও পুকুর থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তারা ড্রেজারের মাধ্যমে তলদেশ দিয়ে আমাদের পুকুর ও জমি থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। এতে ভাঙনের মুখে পড়েছে পুকুর পাড়। পুকুরের গভীরতা হয়ে গেছে ৭০/৮০ ফুট। এর আগে প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার গুলো পানিতে ফেলে দিয়ে যায়। প্রশাসনের লোকজন যাওয়ার পর তারা পানি থেকে ড্রেজার গুলো তুলে নেন।
আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগকারী ছোবা মিয়া বলেন, মনির আমার কাছে সাড়ে ১২ লাখ টাকায় পুকুর ইজারা দিয়েছে। কিন্তু টাকা নেওয়ার দীর্ঘদিন পরও পুকুর বুঝিয়ে দেয়নি। এদিকে তারা পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করে ৭০/৮০ ফুট গভীর করে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিপন জানান, দীর্ঘদিন যাবত ড্রেজারের মাধ্যমে তারা বালু উত্তোলন করে আসছে। প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কারো বাধা শুনেন না। এতে করে বাড়িঘর, কৃষি জমি ও জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক টাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা চাই এই অবৈধ বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ করা হোক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, এর আগেও ওই এলাকায় দুইবার অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার গুলো বন্ধ করে দিয়েছি। ড্রেজার গুলো পানিতে ফেলে দিয়েছি, ধ্বংস করেছি। তারা যদি পুনরায় ড্রেজার স্থাপন করে থাকে আবারও অভিযান চালানো হবে।
এই বিষয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে একজন কামাল মীর বলেন, আমরা আমার ভাইয়ের পুকুর থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছি৷ তাতে অন্যদের কেন সমস্যা হবে?
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বালু উত্তোলন ড্রেজার
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh