৭ বছর ধরে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাঠদান, নিশ্চুপ কর্তৃপক্ষ

বিদ্যালয় চলাকালীন সময় হঠাৎ করেই ধসে পড়লো ছাদের পলেস্তারা। মুহূর্তেই ছাদের বড় একটা অংশের দুর্বল রডগুলো বেরিয়ে পড়ল। আর ভেঙ্গে পড়া পলেস্তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল শ্রেণিকক্ষের সবখানে। এ দৃশ্য নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। তবে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছেন ঘটনার সময় শ্রেণিকক্ষে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়া এ কক্ষটিতে নবম শ্রেণির পাঠদান হয়ে থাকে। এই কক্ষে দীর্ঘ সাত বছর ধরে পাঠদান চলছে। কক্ষটি সাত বছর ধরেই অনিরাপদ অবস্থায় আছে। ঘটনার দিন পর্যন্ত গত সাত বছরে কর্তৃপক্ষ কক্ষটি মেরামতে নেয়নি কোনো উদ্যোগ। তাদের টনকও নড়েনি।

আজ সোমবার (২৮ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই কক্ষে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। 

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ওই শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে। সৌভাগ্যক্রমে ঘটনার সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কক্ষটিতে ছিলেন না। তারা ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী (টেস্ট পরীক্ষা) ফলাফল ঘোষণার জন্য অন্য আরেকটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। অন্যথায় ঘটে যেতে পারতো বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনা। 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। এরপর ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে তিন রুম বিশিষ্ট একতলা ভবনটি নির্মিত হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে নবম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। যেটির পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়েছে। এই শ্রেণিকক্ষের পাশেই প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের অফিস কক্ষ। তার পাশেই ছাত্রী মিলনায়তন। বর্তমানে তিনটি কক্ষের অবস্থা খুবই নাজুক। বছর দুয়েক আগে শিক্ষকদের অফিস কক্ষের পলেস্তারাও ভেঙ্গে পড়েছিল। এছাড়া কক্ষগুলোর ফ্লোরও ভেঙ্গে দেবে গেছে। সব মিলিয়ে ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও নিরুপায় হয়ে ভবনটি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ, বিদ্যালয়টিতে এ ভবন ছাড়া আর কোনো পাকা ভবন নেই। এছাড়া দু’টি টিনশেডের ঘর থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখানে চারটি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও প্রয়োজন রয়েছে সাতটির। আর টিনের ঘরে প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের অফিস করার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া ও মাহফুজ শেখ বলে, গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে জরাজীর্ণ ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। ওই কক্ষে আর পাঠদান হচ্ছে না, ঢুকতেও ভয় পাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন একটি ভবন দিবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।  

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও নতুন ভবন পাচ্ছি না। ভগ্নদশা ভবনটিতে পাঠদান দেয়াসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের অফিস করতে ভয় করছে। যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছি। কখন কী হয়, সেই আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হয়। আমাদের দাবি, নতুন একটি ভবন চাই।

প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার কুণ্ডু জানান, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে একটি মাত্র পাকা ভবন থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, নতুন একটি ভবন চাই। আশা করছি সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে নতুন ভবন অনুমোদনের জন্য যে ধরণের প্রক্রিয়া রয়েছে, সে ব্যাপারে তাদেরকে সহযোগিতা করব। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভূমিকা রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //