যশোরের বিষমুক্ত বাঁধাকপি রপ্তানি হচ্ছে

যশোরে বিষমুক্ত বাঁধাকপি এবারও রপ্তানি করা হবে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বাঁধাকপি ২০১৮ সাল থেকে রপ্তানি করা হচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানির কাজে কৃষকদের সাহায্য করছে। সদর উপজেলার চুড়মনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নের শাহাবাজপুর গ্রামে সবজি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। 

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবজির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় যশোরে। গ্রীষ্মকালীন, আগাম শীতকালীন ও শীতকালীন- এই তিন ভাগে বারো মাস সবজির চাষ হয়ে থাকে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির চাষ হয় যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। নতুন করে বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরের কিছু এলাকা যোগ হয়েছে। 

এবার যশোর সদর উপজেলায় শীতকালীন আগাম সবজির চাষ হয়েছে ২৮শ হেক্টর জমিতে। শুধু বাঁধাকপি চাষ হয়েছে ৬১৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হৈবতপুর ইউনিয়নে ১৮০ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ১৫০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। ভরা মৌসুমে চাষের পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বাড়বে। 

আব্দুলপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বারো মাস বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। তবে বেশির ভাগ জমিতে আবাদ করে থাকেন বাঁধাকপির। এবারও ১ বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন বাঁধাকপির চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিবছর তার ক্ষেতের সবজি রপ্তানি হয়। এবারও বিদেশের বাজারে পাঠাবেন বলে আশাবাদী। রফিকুল ইসলাম আরও জানান, কপি রপ্তানি করে তারা বেশি লাভবান হন। 

আরেক কৃষক রাজু আহমেদ জানান, বাঁধাকপি রপ্তানিতে কৃষকের মুখে থাকে হাসির ঝিলিক। শীতের শেষ দিকে স্থানীয় সবজির দাম একেবারে কম পাওয়া যায়। প্রতি পিস বাঁধাকপির দাম ৫ থেকে ৬ টাকায় এসে দাঁড়ায়। তা-ও অনেকে নিতে চায় না। সেখানে রপ্তানিকারকরা প্রতি পিস বাঁধাকপি ১০ টাকা দরে কেনেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। 

শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম জানান, ২ বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন বাঁধাকপি চাষ করেছেন। ভরা মৌসুমে চাষের পরিমাণ বেড়ে হবে ৮ বিঘা। আগাম শীতকালীন হিসেবে এখন স্থানীয় বাজারে দাম বেশি। তবু রপ্তানি করলে আরও বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বপ্না রানী জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও চুড়ামনকাটির মাঠে সবচেয়ে বেশি বাঁধাকপির চাষ হয়। এখানকার অধিকাংশ চাষি কপি রপ্তানি করে লাভবান হচ্ছেন। যে কারণে কপি চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে। 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, যশোর সবজির জেলা হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। এখানকার সবজির সুনাম অনেক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশের বাজারে। ২০১৮ সাল থেকে যশোরের বাঁধাকপি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের বাজারে রপ্তানি শুরু হয়। ২০২১ সালে ৫৯০.৭২৪ টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়, যার বাজারমূল্য পাওয়া যায় ৯৫ লাখ ৮ হাজার ৩০৯ টাকা। 

উল্লেখ্য, যশোর জেলায় এবার ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। চাষিরা বাম্পার ফলন পেয়েছে, দামও পাচ্ছে অনেক। পুরো শীতকালে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //