বাঁচার আকুতি পাবনার মেধাবী শিক্ষার্থী মীমের

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস এবং ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন এ প্লাস। এমনই একজন তুখোড় মেধাবী শিক্ষার্থী পাবনার উম্মে কুলসুম মীম (১৯)। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি; কিন্তু হঠাৎ করেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কিডনিজনিত সমস্যায় মৃত্যুর প্রহর গুণছেন মীম। দেশে ও ভারতের চেন্নাইয়ে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর চিকিৎসায় ইতিমধ্যে পরিবারটির খরচ হয়ে গেছে প্রায় সাত লাখ টাকা। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম।

এখন প্রতি সপ্তাহে ৩টি করে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে তার। জীবনের এই কঠিন যুদ্ধে এসে রাতে ঘুমাতে পারেন না মীম। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন মীম ও তার পরিবার।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের হাটুরিয়া জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আবু মিরাজ ও মোছা. নুরজাহান পারভীন দম্পতির দুই মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় উম্মে কুলসুম মীম। সবার বড় নাজমুল হাবিব সৌরভ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে থার্ড সেমিস্টারের শিক্ষার্থীর। সবার ছোট সাদিয়া আফরিন জেরিন বেড়া আলহেরা একাডেমির নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা আবু মিরাজ ছিলেন একই স্কুলের শিক্ষক। মা গৃহিনী। বেড়া আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মীম।

পরিবারের সদস্যেদের সঙ্গে মীম।

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার; কিন্তু হঠাৎ করেই সে স্বপ্নে আঘাত হানে এক দুঃস্বপ্ন। ২০২০ সালে করোনার মধ্যে চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করেন মীম। সেইসাথে তার উচ্চমাত্রার প্রেসার দেখা দেয়। প্রথমে চক্ষু হাসপাতাল, সেখান থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মীমের দুটো কিডনিতেই সমস্যা চিহ্নিত করেন। সেখান থেকে জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটে দেখানো হলে একই সমস্যা ধরা পড়ে। পরে ২০২১ সালে জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয় মীমকে। এক মাস ভর্তি থাকার পর কিছুটা উন্নতি হলেও, কিছুদিন আবারো অবনতি হয়। অবশেষে চিকিৎসক মীমের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার পরামর্শ দেন।

এমন পরিস্থিতিতে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট না করে যদি ওষুধে ভালো হয় এমন আশায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৬ জুন ভারতের চেন্নাইয়ে সিএমসি হাসপাতালে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয় মীমকে। একমাস চিকিৎসা করানোর পর অবশেষে সেখানকার চিকিৎসকরাও দ্রুত মীমের ডায়ালাইসিস শুরুর কথা বলেন এবং কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার পরামর্শ দেন। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে মীমের। এতে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আর এ পর্যন্ত বাবার শেষ সম্বল, বাড়ির জমি ও ধারদেনা করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে মীমের চিকিৎসায়। নিঃস্ব হয়ে এখন চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম মেধাবী শিক্ষার্থী মীমের। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা ও ডায়ালাইসিস করার মতো অর্থ সংকটে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন মীম ও তার স্বজনরা।

উম্মে কুলসুম মীম এ প্রতিবেদককে বলেন, সুস্থ্য জীবন থেকে হঠাৎ করেই এখন এক অস্বাভাবিক সময়ের মধ্যে যাচ্ছি। ভালো কিছুই ভাবতে পারছি না। জীবনযুদ্ধ কাকে বলে সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একেকটা দিন কাটছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন আমি বাঁচতে চাই, সুস্থ্য হয়ে আবার পড়ালেখা করতে চাই। আমি ডাক্তার হতে চাই। আপনারা আমাকে বাঁচান।

মীমের মা নুরজাহান পারভীন বলেন, মেয়েটাকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় প্রতিদিন সেই চিন্তায় আমি ঘুমাতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই, তিনি যেন আমার মেয়েটার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সবার সহযোগিতায় হয়তো আবার সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারেন আমার মেয়ে।

তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন মীমের ভাই সৌরভের এই নাম্বারে। ০১৭২১-৯৩৭৮৪৪ (বিকাশ, পার্সোনাল) ও ০১৬১০-২২৭১৫৫ (রকেট, পার্সোনাল)।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //