ডিভোর্স না দিলে স্ত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি এএসপির

মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রুবেল হক নামে এক সহকারী পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় মির্জাপুর থানায় মামলা না নেওয়ায় রুবেলসহ চারজনকে আসামী করে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার সায়মা সুলতানা সিমি।

গত ৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে  রুবেল, তার বাবা জারজিস আলী মধু, মা নাসিমা বেগম ও বোন নাসরিন খাতুনের নামে মামলা দায়ের করেন সিমি।

সিমির স্বামী রুবেল বর্তমানে টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ড্যান্টের স্টাফ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। রুবেল চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেররশিয়া গ্রামের জারজিস আলী মধুর ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মে নওগাঁর ধামইরহাট থানার চকযাদু গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে সায়মা সুলতানা সিমির সাথে রুবেলের বিয়ে হয়। সিমির পরিবার বিয়ের সময় ১০ লাখ টাকা ও ১২ ভরি স্বর্ণ রুবেলকে দেন। তারপরেও বিয়ের পর থেকেই রুবেল যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন সিমির ওপর। 

পরবর্তীতে রুবেল ও তার পরিবার ২০ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন। নারায়ণগঞ্জ থাকাকালীন সময়ে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট শারীরিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করেন রুবেল। সেসময় মারাত্মকভাবে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন সিমি। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্ত হন। তখন বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও জানান সিমি। অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে রুবেল সিমিকে আরো মারধর করেন। 

সিমি ঢাকায় বসবাসরত তার বোনের বাসায় আসলে সেখানে এসেও রুবেল তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় ৩১ অক্টোবর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সিমি। এর কিছুদিন পর রুবেল টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে বদলি হয়ে আসেন। মহেড়া অফিসার্স কোয়াটারে থাকাকালীন সময়ে চলতি বছরের ১ মে সামান্য কথা কাটাকাটি নিয়ে সিমিকে ব্যাপক মারধর করেন রুবেল। তিনি সিমির শরীরের বিভিন্ন গোপন অংশে আঘাত করেন যাতে তিনি কাউকেও দেখাতে না পারেন। এছাড়াও মেরে সিমির হাত ভেঙে দেন তিনি। পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা না নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করায় তিনি টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে না যাওয়ায় দিনদিন পাশবিক নির্যাতনের পরিমাণও বাড়াতে থাকেন রুবেল। 

এছাড়াও রুবেলের সাথে থাকতে হলে আরো ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। মহেড়া অফিসার্স কোয়ার্টারে রুবেলের বাবা, মা ও তার বোন থাকতেন। তারাও রুবেলের সাথে সিমিকে মারধর করতেন। তাদের নির্যাতনে মারাত্মক আহত হয়ে গত ৯ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিমি চিকিৎসা নেন। 

এর আগে গত ৩ জুলাই রুবেলের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুত্বর আহত হয়ে ৯৯৯ কল করেন। পরে মির্জাপুর থানা থেকে উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন এসে ঘটনা তদন্ত করেন। এসব ঘটনা তিনি মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্টকে জানান। তার কাছে থেকেও কোনো সুবিচার না পেয়ে সিমি গত ৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে রুবেল, তার বাবা জারজিস আলী মধু, মা নাসিমা বেগম ও বোন নাসরিন খাতুনের নামে মামলা দায়ের করেন।  

ভুক্তভোগী সিমি বলেন, রুবেল প্রতারণা করে আমাকে বিয়ে করেছেন। তিনি এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন। সে পরকীয়ায় আসক্ত। আমার সামনেই সে অন্য মেয়ের সাথে চ্যাটিং করে। বাধা দিতে গেলেই ব্যাপক মারধর করে সে। ডিভোর্সের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত মারধর করে আসছে রুবেল। আমি নিজে থেকে চলে না গেলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে সে। 

তিনি আরো বলেন, আমি সব সময়ই রুবেলের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোয়ার্টারে সবার সামনেই তারা আমাকে মারধর করতেন। এছাড়াও সে দম্ভ করে বলে আমি পুলিশ অফিসার। আমার কিছুই হবে না। এ ঘটনায় আমি গত ১ সেপ্টেম্বর মির্জাপুর থানায় মামলা করতে যাই। ওসি মামলা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে আদালতে মামলা দায়ের করি। আমার উপর যে নির্যাতন ও অত্যাচার হয়েছে আমি তার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, সায়মা সুলতানা সিমি নামে এক নারী একটি অভিযোগপত্র নিয়ে এসেছিলেন। ঘটনাটি যেহেতু দাম্পত্য কলহের তাই আমি টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারকে অবগত করি। তাকে মামলা গ্রহণের জন্য নিষেধ করা হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য বলা হয়েছিল। 

সিমির আইনজীবী মইদুল হোসেন শিশির বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শুনানি শেষে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, থানায় মামলা নেওয়ার আগেই আদালতের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর বসার তারিখ ছিল। কিন্তু সিমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেছেন। এ কারণে থানায় মামলা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //