২১ আগস্ট ট্র্যাজেডি

কেমন আছে শেখ হাসিনার দেহরক্ষী মাহাবুবুরের পরিবার

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হন তাদের একজন ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মাহবুবুর রশিদ। তিনি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের হারুন-অর-রশিদ মোল্লা ও হাসিনা বানুর সন্তান।

জানা যায়, নিহত মাহাবুবুর রহমান ২০০২ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দশ ভাইবোনের মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়, নিজ গ্রামেই কেটেছে তার দূরন্ত কৈশর। এসএসসি পাশের পর মাহাবুবুরের পড়াশুনা আর এগোয়নি। জীবন ও জীবিকার তাগিদে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সৈনিক পদে যোগ দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করেন।

২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠায়। কিন্তু ২০০২ সালে ল্যান্স কর্পোরাল পদে থাকা অবস্থায় মাহাবুবুর চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। ঐ বছরই বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িচালক ও ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে যোগ দেন। 

সরেজমিনে মাহাবুবুরের বাড়িতে গেলে তার বৃদ্ধ পিতা হারুন অর রশিদ বেরিয়ে এসে শূন্য চোখে একবার তাকালেন এই প্রতিবেদকের দিকে। অনেক্ষণ পর নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে মারা গেছে ঠিকই, কিন্তু সে তার চাকরির কাজ ঠিকমতো করে গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।

বৃদ্ধা মা হাসিনা বেগম বলেন, আমার মতো যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।

মাহাবুবের স্ত্রী শামীমা আক্তার আসমা বর্তমানে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকাতে থাকেন। ছেলে হারানোর শোক আর ধারদেনা করে কোনো রকম টিকে আছে মাহাবুবুরের পরিবার।

জানা যায়, গ্রেনেড হামলার দিন মাহবুবুরের ছুটি ছিল। তারপরও জনসভায় যোগ দিতে ঢাকার বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে হাজির হন সেখানে। বিকেল ৫টার দিকে শেখ হাসিনার বক্তব্য শুরু হয়। ঠিক সে সময় জনসভাস্থলে একের পর এক গ্রেনেড ছুঁড়ে মারা হয়।

নিহত মাহাবুবুরের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তার বৃদ্ধ বাবা। ছবি: সংগৃহীত। 

নিমিষেই চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়, এসময় শেখ হাসিনা তার বুলেট প্রুফ গাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সাহসী মাহবুবুর তাকে গাড়িতে প্রবেশ করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু শেখ হাসিনা মাহবুবুরকে চিৎকার করে বলেন, না আমি যাব না, ওরা মারে, আমাকে মারুক।

কিন্তু সে কথায় কান না দিয়ে তিনি শেখ হাসিনাকে গাড়ির মধ্যে ঠেলে দেন। আর ঠিক সে সময় ঘাতকের একটি বুলেট তার মাথার পেছন দিয়ে প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসময় আরো কয়েকটি গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়। সেখানেই পড়ে থাকে শেখ হাসিনার  দেহরক্ষী মাহবুবুর।  কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ সে রাতেই মাহবুবুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহবুবুরের মরদেহ পরদিন ২২ আগস্ট খুব সকালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া হাইস্কুলের মাঠে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বৃদ্ধ পিতা হারুনুর রশিদ মোল্লা মাঠে কাজ করছিলেন। হেলিকপ্টারের বিকট শব্দে চারদিক থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে ফুলবাড়িয়া হাই স্কুল মাঠে।

জানা যায়, পরিবারের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি সব কিছুই চলতো মাহাবুবুরের তদারকিতে। তার অবর্তমানে পরিবারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মাহাবুবুরের বৃদ্ধ পিতা তার ৪১ শতক জমি চাষ করে কোনো রকমে সংসার চালায়।

তখন মাহাবুবুরের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হলেও, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন কুষ্টিয়ার সন্তান কর্ণেল জামিল। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন কুষ্টিয়ার আরেক সন্তান মাহাবুবুর।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //