ঘর পাননি ৫০ শতাংশ গৃহহীন পরিবার

সুবিধাবঞ্চিত রাঙামাটির পশ্চাৎপদ এলাকার বাসিন্দারা

বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- সরকারপ্রধানের এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশজুড়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় পশ্চাৎপদ ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হয়।

তবে এই কার্যক্রমের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার ঘর প্রদান করা হলেও সরকারি হিসাবে এখনো ঘর পাননি রাঙামাটির ৫০ শতাংশ গৃহহীন পরিবার। যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগ ও সংকটাপন্ন পরিস্থিতির কারণে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন পশ্চাৎপদ এ এলাকার মানুষ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দশ উপজেলায় সরকারি হিসাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৯০৭টি। গৃহপ্রদান কার্যক্রমের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। সরকারি হিসাবেই জেলার আরও ১ হাজার ৪৩০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এখনো সরকারি ঘর পাননি। ২ হাজার ৯০৭টি গৃহহীন পরিবারের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ভৌগোলিক ও পরিবেশগত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম ও পশ্চাৎপদ অঞ্চল বলা হয়ে থাকে রাঙামাটি জেলাকে। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়িসহ দশ উপজেলা নিয়ে গঠিত রাঙামাটির যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগ, নির্মাণ ব্যয়ে চাহিদার চেয়ে অপ্রতুলতা, সংকটাপন্ন পরিস্থিতির কারণে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর গৃহহীনরা সরকারি ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহহীনদের জন্য সরকারি ঘর নির্মাণে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। 

রাঙামাটির নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির নেতা এম জিসান বখতেয়ার বলেন, সরকারিভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গৃহহীনদের ঘর প্রদানের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে দুর্গম এলাকার গৃহহীনরা এই উদ্যোগ থেকে বেশিরভাগ বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদেরকেও সুবিধার আওতায় আনতে প্রয়োজনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করে হলেও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সারাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক। সাজেক ইউনিয়নের সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, সাজেক ইউনিয়নের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাস ও দুর্গম হওয়ায় এই এলাকার মানুষ খুব বেশি বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন না। 

জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ধূপ্পারচর এলাকার বাসিন্দা অসীম চাকমা জানান, বিলাইছড়ি উপজেলার অনেক দরিদ্র পরিবার এখনো সরকারি ঘর পাননি। দেখা গেছে স্থানীয়ভাবে যারা বেশি দরিদ্র, দিন আনেন দিন খান; এ ধরনের মানুষও বাদ পড়েছেন। আমার এলাকাতেও এমন পরিবার আছেন।

গৃহহীনদের ঘর হস্তান্তর প্রসঙ্গে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ের পর থেকে ক্রমান্বয়ে ঘরগুলোর কিছুটা নকশা পরিবর্তনজনিত কারণ ও আরও টেকসই ঘর নির্মাণের কারণে ব্যয় বরাদ্দ বেড়েছে। আপাতত বেশি দুর্গম এলাকাগুলোতে এই প্রকল্পের অধীন গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //