ঝিনাইদহে ছয় মাসে ২৩১ জনের আত্মহত্যা

গত ছয় মাসে ঝিনাইদহ জেলায় ২৩১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মহেশপুর উপজেলাতেই আত্মহত্যা করেছেন ৩২ জন। সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

সমাজ বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যখন কোনো ব্যক্তির জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে করে, তখনই ধর্ম-কর্ম ভুলে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এখানে প্রচণ্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপও আত্মহত্যার পেছনে কাজ করে। আবার জাগতিক দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা ও অপমান থেকে আত্মরক্ষা করতে দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিরা আত্মহননের মধ্য দিয়ে মুক্তি খোঁজে।

জানা যায়, মহেশপুর উপজেলায় গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এসময়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩২ জন, যার মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা রয়েছেন।

গত জানুয়ারিতে ৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৮ জন, মার্চে ৪ জন, এপ্রিলে ৮ জন, মে’তে ৫ জন এবং জুন মাসে ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে বেশি ভাগই গলায় ফাঁস নিয়েছেন বা বিষপান করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। মাদক, প্রেমে ব্যর্থ, পারিবারিক কলহ, অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে এদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে।

মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ বিন সেতু বলেন, পারিবারিক কারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে। মানসিক চাপের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেকে। তবে বেশির ভাগ আত্মহত্যা পারিপারিক কারণেই সংগঠিত হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারিবারের এক সদস্যের প্রতি অন্য সদস্যদের সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে, তারা কখন কি করছেন, কোন অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠন রুরাল ডেভলপমেন্ট সেন্টারের (আরডিসি) নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান বলেন, পারিবারিক কারণেই ঝিনাইদহে বেশিভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। তবে আমরা সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন সভা সেমিনারের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতন করে চলেছি।

তিনি জানান, বাল্যবিবাহও আত্মহত্যার একটি কারণ। এ কারণে সংগঠনটি বাল্যবিবাহ বন্ধেও কাজ করছে। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতন হলে আত্মহত্যার হার কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম মনে করেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে সামাজিকভাবে সকলকে সচেতন করার জন্য সরকার, এনজিওসহ সবধরনের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //