ঝিনাইদহ পৌর নির্বাচন

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান প্রয়োজন

নানা জটিলতা কাটিয়ে প্রায় একযুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন। পুরো নির্বাচনী এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। দিনরাত চলছে প্রচারণা মাইকিং, মোড়ে মোড়ে সড়কজুড়ে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার। বেশকিছু নির্বাচনী সহিংসা ঘটলেও নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপে এখন তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো নির্বাচনী এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। পৌরসভার কলাবাগান, মডার্ণমোড়, মহিলা কলেজ পাড়া, আদর্শপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা হয়। আদর্শপাড়া এলাকায় মোড়ে দাঁড়িয়ে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পাঁচ বন্ধু। এবারই প্রথম ভোট দেবেন তারা। তরুণ এই ভোটাররা বলেন, আমরা চাই আধুনিক চিন্তাধারী ব্যক্তিই হবেন নগর পিতা। কিন্তু সেজন্য ভোটটা সুষ্ঠুভাবে দেওয়ার পরিবেশ থাকতে হবে। যারা সন্ত্রাস ও উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন তারা যেন ভোটের মাঠে না থাকতে পারেন সেটা কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করতে হবে।

পৌর এলাকার ধোপঘাটা এলাকায় দাঁড়িয়ে নির্বাচন বিষয়ে আড্ডা দেওয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪-৫ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, চটপটে তরুণ ও যে সবসময় মানুষের পাশে থাকবে, ছিলো এমন প্রার্থীকেই আমরা ভোট দেবো। হিজল ভাইকে আমরা আগেও আমাদের নেতা হিসেবে মেনেছি। এবার তিনি দাঁড়িয়েছেন ভোটে। তাকেই আমরা ভোট দিবো।

নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের আবদুল খালেক, নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী ওরফে হিজল, মোবাইল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম এবং হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঝিনাইদহ পৌর নির্বাচন নিয়ে করা বিশেষ এক জরিপে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল। এবার নগরীর ভোটারদের মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করেছেন নতুন ভোটাররা। তাই ভোটে জয়-পরাজয়ে নতুন ভোটারদের থাকবে বিশাল ভূমিকা। তরুণদের ভোটের বেশিরভাগই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে হিজলের। ঝিনাইদহের মানুষের কাছে হিজলের পরিবারের ওপরে আস্থা-বিশ্বাস প্রশ্নাতীত। মানুষের পাশে থাকার স্বীকৃতি স্বরূপ উৎসাহিত হয়েও তাকে ভোট দেবেন পৌরসভার বাসিন্দারা। এটা মনে করছেন অনেকেই।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান ওরফে মাসুমকে শুরুতে ভোটের মাঠে নামিয়ে দিলেও পরবর্তীতে তার পাশ থেকে সরে যান দলের নেতাকর্মীরা। এ কারণে তিনি প্রচার প্রচারণা থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে রেখেছিলেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থিতা বাতিলের পর তিনি অবশ্য বেশ সক্রিয় হয়েছিলেন। এছাড়া হাতপাখা মার্কার প্রার্থী ভোটের মাঠে একরকম অনুপস্থিত বলেই জানা গেছে। 

এদিকে নির্বাচন কমিশনের কঠোর ভূমিকায় সন্তুষ্ট ভোটাররা। গুরুতর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় খোদ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে একটা  স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের প্রতি সাধারণ মানুষ ও প্রার্থীদের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনটি জাতীয় পর্যায়ের মর্যাদা পেয়েছে। জাতীয় সকল গণমাধ্যমেই ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচনী সহিংসতার খবর গুরুত্বসহকারে স্থান পাওয়ায় এই পৌর নির্বাচনটি কমিশনের জন্য পরীক্ষা হিসেবেও গণ্য করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

নির্বাচনে প্রচারাভিযানের শুরু থেকে একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল খালেক ও তার সমর্থকরা। একাধিকবার স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলের পৈত্রিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১ জুন হামলার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিজল ও তার ভাইসহ আরো তিনজন। নির্বাচনে সন্ত্রাস ও সহিংসতার ঘটনা ভালোভাবে নেননি স্থানীয় জনগণ। বর্তমান অবস্থায় স্থানীয় জনগণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কঠোর অবস্থান নেওয়ার দাবি জানান। তা না হলেও নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করছেন তারা।

নির্বাচনের পরিবেশ ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাবেক মেয়র ও ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল খালেককে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে পৌরসভার পিছিয়ে পড়া বাসিন্দাদের বেকারত্ব সমস্যা দূর করতে তিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবেন। তিনি সবার মৌলিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন। পৌরসভার সব বঞ্চিত মানুষের না বলা কথা শুনে তাদের সব সমস্যার সমাধান করবেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার সবসময় নগরবাসীর পাশে ছিল। সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত প্রার্থী হিসেবে আমি সকলের ভোট চাই। কারও কথায় না, যাচাই-বাছাই করে ভোট দিন। ভালো মানুষ যদি পৌর পিতা হয় তবেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। নয়তো দুর্দিন যাবে না।

একনজরে পৌরসভার ভোটার ও বুথ : জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আ. ছালেক জানান, ঝিনাইদহ পৌরসভায় মোট ভোটার ৮২ হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪০ হাজার ৪৪৬ জন ও নারী ভোটার ৪২ হাজার ২৪৯ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ৪৭টি কেন্দ্র ও ২৬৫টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। 

এছাড়া তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। ভোটারদের আশ্বস্ত করে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //