মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ফের র‍্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’

কুমিল্লায় একটি হত্যা মামলার আসামি শনিবার গভীর রাতে র‍্যাবের সাথে কথিত এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

গত ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা র‍্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার উপর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর র‍্যাবের এই ধরণের বন্দুকযুদ্ধ বা কেউ নিহত হবার খবর পাওয়া যায়নি।

কিন্তু র‍্যাব বলছে, একটি বন্দুকযুদ্ধে শনিবার রাতে মোহাম্মদ রাজু নামের এক ব্যক্তি নিহত হন, যিনি কুমিল্লায় একজন সাংবাদিককে হত্যার মামলার প্রধান আসামি।

র‍্যাব জানিয়েছে, ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লার আদর্শ উপজেলার গোলাবাড়ি এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

গত বুধবার এই সাংবাদিক নিহত হওয়ার পর কয়েকদিন ধরে কুমিল্লার সাংবাদিকেরা নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

গত ডিসেম্বরে ‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে র‍্যাব ও এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার চার মাসেরও বেশি সময় পর র‍্যাবের সাথে আবারো কথিত বন্দুকযুদ্ধে কারও নিহত হবার ঘটনা ঘটলো।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য র‍্যাবের সমালোচনা করে এগুলো বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলো।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে স্বাগত জানিয়েছিলো এবং এরপর থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের আর কোনো খবর গণমাধ্যমে আসেনি।

এখন কুমিল্লায় মোহাম্মদ রাজু কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা আবারো ফিরে এলো।

মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলছেন, জনমনে ক্ষোভ বা চাপ তৈরি হলে আগেও এগুলো কিছুদিন বন্ধ থাকতো। মেজর সিনহা রাশেদের ঘটনার পরেও কিছুদিন বন্ধ ছিলো। আসলে চাপ বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা কঠিন। বন্ধ করতে হলে গুম বা ক্রসফায়ারের প্রতিটি ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

গত ১৩ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারত সীমান্তের হায়দারাবাদ এলাকায় সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকারকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তিনি মারা যান।

মহিউদ্দিন সরকারের মা নাজমা আক্তার কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ রাজু নিহত হবার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে তার পুত্র হত্যার বিচার পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

নাজমা আক্তার এ ঘটনায় যে মামলা করেছিলেন সেখানে মোহাম্মদ রাজুর সাথে মনির ও পলাশসহ আরো কয়েকজনের নাম ছিলো। পুলিশ ইতোমধ্যেই মনির ও পলাশকে আটক করেছে।

কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর কুমিল্লায় র‍্যাবের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, এ ঘটনায় র‍্যাবের একজন সদস্য আহত হয়েছেন।

শনিবার রাতে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা গোলাবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে র‍্যাব -১১ জানিয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমে র‍্যাবের যে ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে র‍্যাব-১১ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিবের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা অবস্থান নিয়েছে খবর পেয়ে র‍্যাবের টহল দল গোলাবাড়ি এলাকায় অভিযানে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা র‍্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি করে। জবাবে আত্মরক্ষার্থে র‍্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলি শেষে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে জানা যায় ওই ব্যক্তি সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি রাজু।

পঁয়ত্রিশ বছর বয়েসী মোহাম্মদ রাজু কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় আগে থেকেই একাধিক অস্ত্র ও মাদক মামলা আছে।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন যে, রাজুর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি দোকান ছিলো এবং সেই দোকানের শেয়ার দেয়া নিয়ে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকারের সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিলো।

এই দ্বন্দ্বে সেখানকার আরো কয়েকজন জড়িত হয়ে পড়েছিলেন যাদের সবার বিরুদ্ধেই মাদকসহ নানা অভিযোগ ছিলো।

এরই জের ধরে ১৩ এপ্রিল রাতে মহিউদ্দিন সরকারকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দুই ব্যক্তি। পরে সেখানে সীমান্তে বিজিবি ফাঁড়ির কাছেই তাকে গুলি করে।

মহিউদ্দিন সরকার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের মোশারফ হোসেন সরকারের ছেলে।

আনন্দ টেলিভিশনের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। এছাড়া দৈনিক কুমিল্লার ডাক নামে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে স্টাফ রিপোর্টার পদে কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনায় মহিউদ্দিন সরকারের মা নাজমা আক্তার যে মামলা করেন তাতে মোহাম্মদ রাজুই ছিলেন প্রধান আসামি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //