গড়াই-মধুমতীর বুকে চাষাবাদ

ফরিদপুরে মধুখালী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গড়াই ও মধুমতী নদী নাব্যতা হারিয়ে মরে যেতে বসেছে। নদীর পার ভেঙে বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। জেগে উঠা চরগুলো জবরদখলে নিয়ে সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাষাবাদ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির দুটো অংশ রয়েছে। এক অংশের নাম গড়াই। আরেক অংশের নাম মধুমতী। এ অংশটি তুলনামূলকভাবে বড়। চন্দনা ও মধুমতী হাত ধরাধরি করে বয়ে চলছে যা অনেক আগেই স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে চন্দনা মধুমতীতে গিয়ে মিশলেও সেখানেও রয়েছে পানি সংকট। 

জানা গেছে, নদীর দুই পাশ এখন শুধু চাষাবাদেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকে আবার নদীর জায়গা ভরাট ও দখল করে বাড়িঘর ও দোকানপাটও নির্মাণ করছেন।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, একসময় দুটি নদীতেই পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তখন নদীর পানি ব্যবহার করেই চাষাবাদের কাজ ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা হতো। বর্তমানে নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। অনেকে আবার নদীর কিছু জায়গা ভরাট করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। নদীর অভয়াশ্রমে এখন আর তেমন মাছ পাওয়া যায় না।  

তারা আরো জানান, একসময় মধুমতী ও চন্দনা নদীতে ছিল প্রবল খরস্রোতা। যা নদীপাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এই দুই নদী নব্য হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। তবে আগে একবার চন্দনা খনন  করা হয়েছিল। এর ফলে এ নদীতে কিছুটা পানি থাকে। কিন্তু নদীর দুই পাশেই ফসল চাষ করা হয়। গড়াই ও মধুমতী নদীর ঢেউ এখন কেবলই স্মৃতি।

উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত এ নদীপথ দিয়ে শিল্পনগরী খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল ও রাজধানী ঢাকায় খুব সহজেই যাতায়াতের সুযোগ ছিল। দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে পৌঁছানোর জন্য পণ্যবাহী বড় বড় জাহাজ একসময় এ নদীপথ ব্যবহার করতো।

কিন্তু বর্তমানে হরিনাডাঙ্গা, মিটাইন, নওপাড়া, কামারখালী ঘাট এলাকাতে নদীবক্ষে বিশাল চর পড়ার কারণে এ নদীপথ একেবারেই নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় ক্রমান্বয়ে মরে যাচ্ছে গড়াই-মধুমতী। আশপাশের খালবিলও শুকিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ।

উপজেলার সীমান্তবর্তী কামারখালী, সালামতপুর, নওপাড়া দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী নদীটি এখন পরিণত হয়েছে আবাদি ক্ষেতে। এ নদী হারিয়ে ফেলেছে তার চিরচেনা রূপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাপনেও রয়েছে পরিবর্তনের ছাপ।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //