একটি তরমুজের দামে মিলছে ১ মণ পেঁয়াজ!

ঝিনাইদহে মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ-রসুনের উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে চাষিরা বাজারে দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। যেখানে একটি বড় মাপের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫’শ টাকা দরে সেখানে একই বাজারে এই দামে পাওয়া যাচ্ছে ১ মণ পেঁয়াজ-রসুন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ঝিনাইদহে প্রতি বছর পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। এরমধ্যে শৈলকুপা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়। উপজেলাটিতে এবার চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। দেশের পেঁয়াজের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান হয় শৈলকুপাতে।

কৃষকরা জানান, গত বছর জেলাটিতে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও এবারে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন কমেছে। গত বছর বিঘা প্রতি ৭০ মণ করে পেঁয়াজ তুলতে পারলেও এবার পাওয়া গেছে ৫০-৫৫ মণ করে। ওই বছরে কৃষকরা প্রতি মণ পেয়াজে দাম পেয়েছিলেন ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা দরে। তবে চলতি বছর বিক্রি হচ্ছে ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে। 

অপরদিকে রসুনের দাম আরো বেশি কমেছে। মসলা জাতীয় এই ফসলটি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মণ ও সর্বোচ্চ ৫’শ টাকা মণ দরে। আবার কোন বাজারে তারও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে রসুন।

তবে এই একই বাজারে মৌসুমি ফল তরমুজের বাজারে দেখা যায় একেকটা বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫’শ টাকা দরে।

দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাটবাজারে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

শৈলকুপাতে সাপ্তাহিক শনি ও মঙ্গলবার দুটি হাট বসে পেঁয়াজের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ব্যবসায়ীরা একদিন আগেই চলে আসে শৈলকুপাতে। তারা ট্রাকে ভর্তি করে পেঁয়াজ নেয় দেশের অন্যান্য বড় বড় হাট-বাজারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার পেঁয়াজ ঢাকার কারওয়ান বাজার, ভৈরব, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেয়া হয়।

শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি। পাইকপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ি বাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পেঁয়াজ, রয়েছে ক্ষেতেও। কৃষকেরা বাড়িতে এনে স্তূপ করে রাখছেন বিক্রির আশায়। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ পেঁয়াজ তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হন উপজেলার কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, উপজেলায় চাষযোগ্য মোট জমি আছে ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর। তারমধ্যে এ বছর পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু পাইকপাড়া গ্রামে চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। বারি-১, লাল তীর, লাল তীর কিংসহ বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ হচ্ছে।

উপজেলার বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে মেয়েরা পেঁয়াজ থেকে গাছ কেটে আলাদা করছেন। বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। ঘর-বারান্দা কোথাও একটু খালি জায়গা নেই।

মনোহরপুর গ্রামের কৃষক লিটু, তাহেরসহ কয়েকজন জানান, প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় এবার এক বিঘায় (৪০ শতাংশ) ৫০ থেকে ৬০ মণ করে পেঁয়াজ পাচ্ছেন। যা বর্তমান বাজার প্রতি মণ ৫শ থেকে ৭শত টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে সার-ওষুধ আর কৃষি শ্রমিকের বিল পরিশোধ করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

 শৈলকুপার চর সোন্দহ গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, তিনিও তার জমিতে এবার পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে ৫শ মণের বেশি পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন। 

আমিরুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। তাই সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

শৈলকুপার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রেজাউল বিশ্বাস জানান, দেশের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান শৈলকুপা থেকে হয়ে থাকে।

উপজেলার পাইকপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কোরবান আলী জানান, এ ব্লকে ৪’শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখানে ১৫৬০টি কৃষি পরিবার রয়েছে। কম-বেশি প্রায় সব পরিবারে জমিতে রয়েছে পেঁয়াজ। চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান।

পেঁয়াজের এমন দুরবস্থার পাশাপাশি আরেক মসলা জাতীয় ফসল রসুন নিয়েও বিপাকে পড়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন চায়না থেকে আমদানি করা রসুনের ছড়াছড়ি। এই রসুন মনপ্রতি ১৫ থেকে ১৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশিয় পুরাতন রসুন যেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন বাজারে পুরাতন রসুন ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

শৈলকুপা বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মশিউর রহমান ও শরিফুল ইসলাম বলেন, রসুন-পেঁয়াজের কোন দাম নেই, অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে এসব ফসল।

উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সোবহান জানান, ১মণ রসুন বিক্রি করে সেই টাকায় ১টি তরমুজও কেনা যাচ্ছে না। তিনি দাবি জানান দ্রুত রসুন ও পেঁয়াজের এলসি (আমদানি) বন্ধ করতে হবে।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, এ উপজেলায় ক্রমেই পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে। এবার অবশ্য প্রাকৃতিক কারণে উপজেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়নি।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে কৃষকদের হতাশা প্রসঙ্গে বলেন, চাষিদের উচিৎ পেঁয়াজ কিছুদিন সংরক্ষণ করা। পেঁয়াজ-রসুনের দাম কমের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //