‘ফেব্রুয়ারি এলেই সংবর্ধনা, বাকি ১১ মাস কেউ খোঁজ রাখে না’

ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে আজও দু’জন বেঁচে আছেন। তারা হলেন- ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ও ভাষা সৈনিক মো. জহির উদ্দিন আহম্মদ। 

বয়সের ভারে ন্যুব্জ পড়া এই দু’ভাষা সৈনিকের শরীরের অবস্থা ভাল নেই। প্রশাসন অথবা রাজনৈতিক দল থেকে তাদের তেমন খোঁজ খবর রাখাও হয় না বলে অভিযোগ তাদের।

ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ও জহির উদ্দিন আহম্মদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তাদের শরীরের অবস্থা খুব ভাল নেই। এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করে ডেকে নিয়ে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু বছরের বাকি ১১মাস কেউ খোঁজ রাখেন না।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারাদেশের মতো সক্রিয় ভূমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২জন ভাষা সৈনিক ছিলেন। এদের মদ্যে ১০ জন প্রয়াত হয়েছেন। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম।

এখন জীবিত আছেন আবদুল কাদের ভাসানী ও মো. জহির উদ্দিন আহম্মদ।

জানা যায়, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা। 

আবদুল কাদের ও জহির উদ্দিন ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেসময়ে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তারা। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ছিলেন আবদুল কাদের ও সভাপতি ছিলেন জহির উদ্দিন। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল সমর্থনে আবদুল কাদের, জহির উদ্দিন ও ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের জন্য বিদ্যালয় গেটে এলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি না দিলে পুলিশ বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যায়।

পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কৌশল ছাত্রনেতারা বিদ্যালয়ের পেছনের সুইপার কলোনি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তারা চিহ্নিত হলে পুলিশ কারণে-অকারণে তাদের ধরে এনে থানায় আটকিয়ে রাখা শুরু করলে তারা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান।   

আবদুল কাদের ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদীটারী) গ্রামে এবং জহির উদ্দিন একই ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //