মালঞ্চ জামে মসজিদ

ইসলামি সংস্কৃতির অনন্য নিদর্শন

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে মুসলমানদের বহু ধর্মীয় স্থাপনা। পারস্য অঞ্চলের পাশাপাশি স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছিল ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত। অগণিত মুসলিম মনীষীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিশ্বজুড়ে আজ ইসলামের মর্মবাণী পৌঁছে গেছে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।

ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি স্থাপনাগুলো সভ্যতা ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিশ্বনন্দিত। এসব স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এবং প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মসজিদ। মুসলিম সংস্কৃতির এমনই এক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন সাততলাবিশিষ্ট মালঞ্চ জামে মসজিদ। এটি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ৫নং নয়ানগর ইউনিয়নের মালঞ্চ এলাকায় অবস্থিত। 

জামালপুর জেলা শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার ও মেলান্দহ উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার অদূরে মালঞ্চ এলাকা। এখানেই প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সাততলাবিশিষ্ট মসজিদ নির্মিত হয়েছে। মসজিদকে ঘিরে পুরো এলাকায় দৃশ্যপট বদলে গেছে। একদিকে মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্কৃতির স্থাপত্য এবং অন্যদিকে সেবা, শিক্ষা ও ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে আলহাজ আব্দুল গফুর মণ্ডল নামে স্থানীয় এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিতৈষী সুরকি পাথর দিয়ে তিন গম্বুজবিশিষ্ট ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৯৮৭ সালে গম্বুজ তিনটি আরও বর্ধিত করে ৭ তলায় রূপান্তর করা হয়। তবে সুদৃশ্য মিনারসহ এটি মোট ১১ তলা। এ মসজিদের আধুনিক রূপ দান করে মূল মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ আব্দুল গফুর মণ্ডলের নাতি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি আলহাজ হাসান মাহমুদ রাজা। 

মসজিদ সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহু দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই মানুষ এখানে ঘুরতে এসে নামাজ আদায় করেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। জুমার দিন প্রায় ৭০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করে থাকেন। তাছাড়াও প্রতি ওয়াক্তে ২০০-২৫০ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। মসজিদের প্রথম তলায় ১৫ কাতার ও দ্বিতীয় তলা থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত ১০টি করে কাতার হয়ে থাকে। প্রতি কাতারে ২২-২৫ জন করে নামাজ আদায় করতে পারেন। 

মসজিদটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ও শিক্ষা-সেবাকেন্দ্র। এ মসজিদকে ঘিরে একটি এতিমখানা, একটি নূরানি মাদ্রাসা ও একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। পাশেই রয়েছে দাতব্য চিকিৎসালয় ও আর্থিক সহায়তা কেন্দ্র। রয়েছে কামিল (স্নাতকোত্তর) একটি মাদ্রাসা। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত আবাসিক ভবন। এই মসজিদে পড়ানো হয়ে থাকে ঈদের নামাজও। মসজিদের সামনে অবস্থিত সুবিশাল দীঘি মুসল্লিসহ স্থানীয় মানুষদের অজু ও গোসলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। 

স্থানীয় মো. আব্দুল মজিদ ও আফছার মণ্ডলসহ আরও অনেকে জানান, আলহাজ আব্দুল গফুর মণ্ডল বৃহত্তর এই এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। তার নাতি দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী আলহাজ হাসান মাহমুদ রাজাও দানশীল ব্যক্তি। প্রায় দেড় কোটি টাকায় সম্পূর্ণ নিজ খরচে তিনি এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ও দাতব্য কেন্দ্রও তিনিই গড়ে তোলেন এবং অদ্যাবধি এসবের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে আসছেন। 

মালঞ্চ জামে মসজিদের পার্শ্ববর্তী মালঞ্চ আল-আমিন জমিরিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসার আলিম পড়ুয়া শিক্ষার্থী আলাল উদ্দিন ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া শোয়াইব সম্রাট হিমেল জানান, এ মসজিদে প্রতিনিয়ত মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে নামাজ আদায় এবং পরিদর্শনে আসেন। বিশেষ করে প্রতি জুমার দিন এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। 

মসজিদের ঈমান ও খতিব মাওলানা এ এফ এম নুরুল ইসলাম জানান, আমি মালঞ্চ আল-আমিন জমিরিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এর পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে মালঞ্চ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োজিত আছি। এ মসজিদটি শুধু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ইবাদতের স্থানই নয়, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। এখানে একটি এতিমখানা, নূরানি মাদ্রাসা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসাও পরিচালিত হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //