কালের সাক্ষী বিরামপুরের রতনপুর জমিদারবাড়ি

সুরক্ষিত দেয়ালে অরক্ষিত অট্টালিকা

দরজা, জানালা কিছুই নেই, নেই প্রবেশের বাধা। অভিভাবকহীন চমকপ্রদ এই সুদৃশ্য দ্বিতল অট্টালিকাটিতে অনেকটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে স্থানীয়রা। তারা রাতের আঁধারে সবই খুলে নিয়ে গিয়েছে। তবে অনেকটা সুরক্ষিত রয়েছে কংক্রিটের দেয়ালের ইটগুলো। নিপুণগাঁথুনির দেয়ালের ইটগুলো এখনো অনেকটা চকচকেই রয়ে গেছে। থরে থরে সাজানো দ্বিতল ভবনের ১৪টি ঘরের দেয়াল, ছাদে রয়েছে অনেক নিদর্শন। সিঁড়িটি বর্তমান স্থাপত্বের একটি দৃষ্টান্ত। অবশ্য আগের মতো জৌলুস নেই। নেই কর্তা বাবুদের নজর। সংস্কার আর নজরদারির অভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবুও প্রতিদিনই এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে পর্যটকরা।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ৩নং খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্বরূপ জমিদার বংশের বাড়ির কথা। অষ্টাদশ শতকে পর আর ঊনবিংশ শতাব্দীর কিছু আগে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য নির্মিত হয় বাড়িটি। যুগ যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটি। বাড়িটি সংস্কার করলে এটিই হতে পারে পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান। সংশ্লিষ্টজনরা বলেন, দ্রুত এটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হবে। তবে স্থানীদের দাবি সংরক্ষণ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে পর্যটক বাড়বে। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষের নামামুখী নানা কর্মস্থান তৈরি হবে।

জনশ্রুতি আছে, ‘অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশরা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী জমিদারের পক্ষে বিরামপুরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করার জন্য রাজকুমার সরকার নামের এক ব্যক্তিকে বিরামপুর উপজেলার এলাকায় প্রেরণ করেন। সেই সময় ওই এলাকায় কোনো রাজপ্রাসাদ ছিল না। অস্থায়ীভাবে একটি ঘর নির্মাণ করে রাজকুমার সরকার সেখানে খাজনা আদায় করতেন। 

চমকপ্রদ এই সুদৃশ্য দ্বিতল অট্টালিকাটির পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন, মাদ্রাসা, মসজিদ, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ বিশাল একটি পুকুর। বর্তমানে রখুনী কান্ত বাবুর ১২শ’ বিঘা জমি ফলদ, বনজ ও ঔষধির সেই বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে অনেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। যতটুকু হদিস মিলেছে ততটুকুই দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয় জমিদার রখুনী কান্ত বাবুর সম্পত্তি ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তি করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, ‘আমি যত দূর জানি রতনপুর জমিদার বাড়িটির মালিক ছিলেন রখুনী কান্ত বাবু। যিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সেই থেকে বাড়িটি অরক্ষিত অবস্থায় আছে। জমিদার বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি এবং জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সম্মতি পেলেই এটি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে জমিগুলো খাস হওয়াই অনেকটা জটিলতা আছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //