টার্মিনাল ছাড়াই চাঁদা তুলছে প্রভাবশালীরা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চলছে টার্মিনালের নামে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি। সরকারি নির্দিষ্ট কোনো টার্মিনাল না থাকলেও টার্মিনালের নামে পরিবহন থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকার চাঁদা তুলছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। 

জানা গেছে, সাটুরিয়ায় সরকারি নির্দিষ্ট কোনো টার্মিনাল নেই। বছরের পর বছর টার্মিনাল না থাকলেও টার্মিনাল পার্কিংয়ের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গায় টার্মিনাল বানিয়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিবহন থেকে পার্কিং ও বিভিন্ন নামে-বেনামে চাঁদা আদায় করছে। পরে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারি স্কুলের জায়গা থেকে টার্মিনালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এরপরও স্কুলের আংশিক জায়গা দখল করে স্বপ্ন পরিবহনের টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাটুরিয়া খাদ্য গুদামের সামনের জায়গা দখল করে এস বি লিংক পরিবহন টার্মিনালের কার্যক্রম চলছে। সাটুরিয়া, নাগরপুর ও মামুদনগর থেকে গাবতলী রুটে বর্তমানে ৭৮টি এস বি লিংক পরিবহন চলাচল করে। এর মধ্যে ২৬টি এস বি লিংক সাটুরিয়া থেকে চলাচল করে। এসব পরিবহন থেকে পার্কিং, মালিক সমিতি সুপারভাইজার, লাইনম্যান বাবদ প্রতিটি গাড়ি থেকে ১২০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। 

এস বি লিংক পরিবহনের মালিক ইদ্রিস বলেন, আগে সাটুরিয়া বাসস্টান্ডে স্কুলের জায়গায় টার্মিনাল ছিল। ইউএনও নিষেধ করার পর আমরা শুধু নাগরপুর টু গাবতলী গাড়ি চালাতাম। পরে সাটুরিয়ার নেতারা আমাদের খাদ্য গুদামের সামনে টার্মিনাল করে দিয়েছে। এখন কে জায়গার ভাড়া নেবে আমরা জানি না। আমরা শুধু গাড়ি চালাই।

সাটুরিয়া টু মানিকগঞ্জ স্বপ্ন পরিবহনের দায়িত্বে থাকা নাছির বলেন, আমি সাটুরিয়াবাসীর যাতায়াতের জন্য সাটুরিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে ২৯ হাজার টাকা দিয়ে তিন মাসের জন্য ইজারা নিয়েছি। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজারা নিয়েছি; কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাকে এখনো কোনো টাকার রশিদ দেয়নি। আমি কোনো চাঁদা তুলি না। আমি এখানে সারা দিন পরিশ্রম করি। আমার তো পেট আছে। আবার অনেক সময় পুলিশ আসলে আপ্যায়ন করাতে হয়। এখন আপনারা আসছেন আপনাদেরও আপ্যায়ন করাতে হবে। সব খরচ এখান থেকেই করতে হয়।

সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেইনি। এমন কোনো প্রমাণও নেই। টার্মিনালের জন্য আগে ইজারা দেওয়া ছিল। আগের ইউএনও স্যার টার্মিনাল ইজারা দিতে নিষেধ করায় টার্মিনাল সরিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু নাছির কীভাবে স্কুলের জায়গায় স্বপ্ন পরিবহনের টার্মিনাল পরিচালনা করে, এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। 

স্থানীয়রা জানান, আমাদের সাটুরিয়াবাসীর যোগাযোগের জন্য একটা বাসস্ট্যান্ড প্রয়োজন। এখন যেভাবে বাসস্ট্যান্ডের নাম করে চাঁদা তোলা হচ্ছে, এতে শুধু প্রভাবশালী নেতাদের পকেটই ভারী হচ্ছে। এত দিন স্কুলের জায়গায় টার্মিনাল বানিয়ে হরিলুট করছে। এখন সেই জায়গায় টার্মিনাল বন্ধ হওয়ায় অনেকের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আবার সরকারি খাদ্য গুদামের সামনের জায়গা ও রাস্তা দখল করে টার্মিনাল বানিয়েছে। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের তেমন জায়গা না থাকায় প্রতিনিয়তই রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার এলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে জনগণকে যাতায়াতের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আরা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম, খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //