রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনে মৃত ১১ জন: ত্রাণ সচিব

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। আরো মৃত্যুর খবর রয়েছে। তবে নিশ্চিত না হওয়ায় তা হিসাব করা হচ্ছে না।

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে  ব্রিফিংকালে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসীন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেনে, অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজার। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৪০০ জন। পুড়ে গেছে ১০ হাজারের বেশি ঘর। বিষয়টি তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার বার অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ। এ ঘটনার রহস্য বের করার পাশাপাশি আগেরগুলোও খতিয়ে দেখা হবে। মানবিক সহযোগিতা দিতে গিয়ে বার বার ঘটা এ ঘটনা যদি পরিকল্পিত হয় তবে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদও বলেছেন, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ।

তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর মৃতের সংখ্যা ১৫ জন বলে উল্লেখ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে।

কিন্তু ইউএনও নিজাম বলেন, আমরা নিশ্চিত না হয়ে মৃতের সংখ্যা বলছি না। এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে ১১ জন। এর বাইরে অন্য কেউ যদি অন্য কিছু বলে থাকে সেটা আমরা এখনো ভেরিফাই করতে পারি নাই।


রোহিঙ্গা শিবিরে ৯ হাজারের কিছু বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেশি।

ইউএনএইচসিআর বিবৃতিতে বলছে, চারশোর মতো মানুষ সেখানে নিখোঁজ আছে এখনো। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করছে তারা।

এসব তথ্যও নিশ্চিত করছে না বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলেন, নিখোঁজ যাদের উল্লেখ করা হচ্ছে, কিছুসময় বাদে দেখা যাচ্ছে তাদের কেউ কেউ ফিরে আসছেন।

নিজাম বলেন, এলাকাটি অনেক বড়। অনেক মানুষ স্বজনদের কাছ থেকে ছিটকে পড়েছেন। সেখানে নিখোঁজ অনেকে ছিল তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কেউ হয়তো তার ভাইকে পাচ্ছে না, সকাল বেলা পায় নাই, ১১টার দিকে হয়তো খুঁজে পেয়েছে। নিখোঁজদের বিষয়টা ওইভাবে বলা যাচ্ছে না।

ঘর হারা রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ওই শিবিরেই তাঁবুতে কিংবা অস্থায়ী শেল্টার তৈরি করে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ক গ্রুপ ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপ আইএসসিজি জানিয়েছে, আগুনে ১০ হাজারের মতো বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে। ঘরহারা হয়েছে ৪৫ হাজারের মতো মানুষ। তবে এই সংখ্যা আগুন লাগার পর ক্ষয়ক্ষতির প্রথম ২৪ ঘণ্টার একটি চিত্র। 

গ্রুপটি আরো জানায়, ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ জানতে এখনো কাজ চলছে। ভবিষ্যতে এই পরিমাণ বাড়তে পারে।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাহিদ ইকবাল জানান, আগুনের কারণে রোহিঙ্গাদের ঘর ছাড়াও স্থানীয়দের কিছু ঘর পুড়ে গেছে। এছাড়া শিবিরে থাকা দুটি হাসপাতালও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা নিজেদের ঘর হারিয়েছে তাদেরকে শিবিরেই অস্থায়ী তাঁবু টাঙিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছে রেড ক্রিসেন্টসহ কিছু বেসরকারি সংস্থা। খাবার ও পানিও সরবরাহ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা ঘর হারিয়েছে তাদেরকে আপাতত অস্থায়ী তাঁবুতেই রাখা হবে।

তবে মানুষ নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই বলেও জানিয়ে ইকবাল বলেন, আগুনের সূত্রপাত সোমবার বিকেলে হওয়ার কারণে মানুষ আসলে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। একারণে নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা কম।


অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর আশ্রয় শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরে তা পাশের ৯, ১০ ও ১১ নম্বর শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ১০টার পর।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ পালিয়ে আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসেন আরো কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। এর মধ্যে উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা আছে প্রায় ৯ লাখ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //