ড্রামে লাশ: নারী গ্রেফতার, হত্যায় ব্যবহৃত হ্যামার-রশি জব্দ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে বাসের ছাদে ড্রাম থেকে ছাবিনা বেগম (৩৪) নামে যে নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, তার মাথায় হ্যামার দিয়ে আঘাতের পর গলায় রশি পেচিয়ে হত্যা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে।

পুলিশ হত্যাকাণ্ডের স্থান চিহ্নিত করে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত হিসেবে হ্যামার ও রশির অংশ বিশেষও জব্দ করেছে। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত গৌরনদীর মাহিলাড়ার খালেক হাওলাদারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পাড়লেও তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে গ্রেফতার করেছে তারা। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই ছাবিনাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

ছাবিনার স্বামী গৌরনদী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দিয়াসুর এলাকার শহিদুল ইসলাম শফিকুল কাতার থাকেন। ছাবিনা সন্তানদের নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়।

ছাবিনার দেবর মো. মনির হাওলাদার জানান, কাতার যাওয়ার জন্য মাহিলাড়ার খালেক হাওলাদার তার ভাবীর (ছাবিনা) কাছে ৪ লাখ টাকা দেয়। বিদেশ পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় এক পর্যায়ে খালেক টাকা ফেরত চায়। ছাবিনা বেগম তাকে দেড় লাখ টাকা ফেরত দেয়। পরে বাকি পাওনা টাকার জন্য বিভিন্ন সময় তাগাদা দিতো খালেক। বিদেশ যেতে না পেরে খালেক নগরীর কাশীপুর আনসার ব্যাটালিয়ন অফিস সংলগ্ন ভূঁইয়া বাড়ি মসজিদের পাশে মাহিলাড়ার বাসিন্দা ব্যাংকার সচীন রায়ের নির্মাণাধীন একটি ভবনে ম্যানেজার হিসেবে কাজ নেয়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে গত শুক্রবার সকালে গৌরনদীর দিয়াসুর বাড়ি আসেন ছাবিনা। ওইদিন সকাল ৯টায় বরিশাল যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে একা বের হন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

গৌরনদী থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত শুক্রবার সকালে কৌশলে ছাবিনাকে বরিশাল নগরীর কাশীপুরে ডেকে নেয় খালেক। কর্মস্থল নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে খালেক তার মাথার পেছনে হ্যামার (বড় হাতুরি) দিয়ে আঘাত করে সে। গলায় রশি পেঁচিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম করতে ব্যারেলের মধ্যে তার লাশ ঢুকিয়ে গড়িয়ারপাড় বাসস্ট্যান্ড থেকে ভূরঘাটাগামী একটি বাসের ছাদে ওই ব্যারেল তুলে দেয় খালেক। বাসটি ভূরঘাটা যাওয়ার পর কেউ ব্যারেল নিতে না যাওয়ায় বাসের শ্রমিকদের সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ব্যারেল খুলে এক নারীর লাশ দেখে তারা পুলিশে খবর দেয়।

গত শনিবার মর্গে ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানার এসআই আব্দুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

গতকাল রবিবার খালেকের বাড়ি অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। একইসাথে হত্যাকাণ্ডের স্থান নগরীর কাশীপুরে নির্মানাধীন ওই ভবনের নিচতলা পরিদর্শন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি আফজাল হোসেন।

এসময় সেখান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি হ্যামার ও গলায় ফাঁস দেয়ার কাজে ব্যবহৃত রশির অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //