ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১০ এএম
বোরো মৌমুমে ফেনীতে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্যমাত্রার কাছেও পৌঁছাতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। জেলায় ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫৫০ মেট্টিক টন নির্ধারণ করলেও অর্জন হয়েছে মাত্র ৩০ দশমিক ২৫ ভাগ। করোনা পরিস্থিতি ও সরকারিভাবে ঘোষিত ধান এবং চালের মূল্য খোলা বাজারের কাছাকাছি থাকায় সংগ্রহে বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, এর আগে ৭মে জেলায় ডাকঢোল পিটিয়ে সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, কৃষকের ন্যয্য মূল্য নিশ্চিত ও কৌশলগতভাবে খাদ্য মজুদ শক্তিশালী করতে চলতি বছরের বোরো মৌসুমে ফেনীতে ৩ হাজার ৯৯৭ মেট্টিক টন বোরো ধান ও ৪ হাজার ৫৫৩ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে খাদ্য বিভাগ। নির্ধারিত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযানের অগ্রগতি কম থাকায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে সংশ্লিষ্ট দফতর। কিন্তু গত মঙ্গলবার সংগ্রহ অভিযানের দ্বিতীয় দফায় বেধে দেয়া সময় শেষ হলেও সব মিলিয়ে ফেনীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৮৭ মেট্টিক টন ধান-চাল। যা লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।
জানা যায়, বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা দরে ৩ হাজার ৯৯৭ মেট্টিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্রা ১ হাজার ৩০৭ মেট্টিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৬ ভাগ মাত্র। অভিযানে মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে জেলায় ২ হাজার ৭০০ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে অর্জন হয়েছে ৮৩০ মেট্টিক টন। যা শতকরা ৩০ ভাগের কাছাকাছি। একই ভাবে ৩৫ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৮৫৩ মেট্টিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার স্থলে অর্জন হয়েছে ৪৫০ মেট্টিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২৪ দশমিক ২৮ ভাগ মাত্র। জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৯৬২ মেট্টিক টন ধান ও চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। জেলায় মোট ৬৯ দশমিক ৭৩ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।
এ বিষয়ে কৃষকরা জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করতে নানা রকমের বিড়ম্বনা রয়েছে। গুদামে ধান নিয়ে আসার আগেই নমুনা জমা দিতে হয়। তারপর কর্মকর্তারা নমুনা দেখে ধান নেবেন কি নেবেন না সেটি নিশ্চিত করেন। চলতি মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির কারনে সড়কে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া থাকায় অনেক কৃষক কয়েক দফায় খাদ্য বিভাগে যোগাযোগকে বিরক্তিকর মনে করেছেন। এজন্য তারা গ্রামের ফড়িয়া অথবা মিল মালিকদের কাছে সরকারি মূল্যের কম দরে ধান দিয়েছেন। তবে, ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন বিড়ম্বনা থাকেনা। তারা কৃষকের বাড়ি অথবা নিকটবর্তী স্থান থেকেই নগদ টাকায় ধান কিনে নেন।
এদিকে ফেনী সদর উপজেলার আবুল হাসেম নামের এক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বালিগাঁওয়ের হকদি গ্রাম থেকে ২শ টাকা ভাড়া দিয়ে ধানের নমুনা নিয়ে আসি। পরের দিন ট্রাক ভরে ধান বিক্রি করি। দুইদিন পর একাউন্টে ধানের মূল্য পরিশোধ করা হয়। ধান বিক্রির ৩ থেকে ৪ দিন পর টাকা পাই। ধানের ট্রাক ভাড়া থেকে শুরু করে সকল খরচই প্রথমে কৃষক তার পকেট থেকে করতে হয়। যা অনেক কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয়না। এসব কারণে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান দিতে চায়না।
এদিকে, সংগ্রহ অভিযানের বিষয়ে ফেনী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শাহিন মিয়া জানান, অভিযানের সময় করোনা পরিস্থিতির কারনে প্রান্তিক কৃষক ঘরে থেকেই ফড়িয়া ও মিলারদের কাছে ধান বিক্রি করে দেয়। তাছাড়া সরকারি মূল্য থেকে ধান ও চালের বাজার মূল্য বেশি থাকায় কৃষক ও মিলাররা গুদামে ধান ও চাল দিতে কিছুটা অনীহাও রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh