সংরক্ষণ হবে সমাধি সৌধ

খাগড়াছড়িতে হাতির জন্য ভালোবাসা

পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা একসময় বেশ দুরূহ ছিল। পাহাড় বেষ্টিত ভৌগলিক গঠন এই অঞ্চলকে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৮শ কিলোমিটার দীর্ঘ পর্বতশ্রেনীর অংশ। তিন জেলায় কর্ণফুলী ছাড়াও বয়ে গেছে একাধিক পাহাড়ি নদী। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বৃটিশ ভারতের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বা চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস নামটি বৃটিশদের দেয়া। পাহাড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই কৃষিভিত্তিক জীবিকার সাথে সম্পৃক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনিক কার্যক্রমে অন্যতম বড় বাঁধা দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা।

তিন দশক আগেও পাহাড়ে প্রশাসনিক কাজে হাতি ব্যবহার করত জেলা প্রশাসকরা। ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা ঘোষণার পর থেকেই জেলা প্রশাসকরা প্রশাসনিক কাজে হাতি ব্যবহার করত। হাতির পিঠে চড়ে প্রশাসকরা সরকারি কাহ করত। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের ব্যবহৃত সর্বশেষ হাতির নাম ছিল ‘ফুলকলি’। এসময় অন্য একটি বন্য হাতির আক্রমণে ‘ফুলকলি ’ মারা যায়। পরে  হাতির স্মৃতি সংরক্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গোলাবাড়ি এলাকায় ফুলকলিকে সমাধিস্থ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের অভাবে ‘ফুলকলি’র কবরস্থান প্রায় জরার্জীণ এবং পরিত্যাক্ত হয়ে পরে। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের লাগায়ো গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ফুলকলির করবটি  পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে উপেক্ষিত ছিল। ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে ডেকে যায় ‘ফুলকলি’র করব। বিভিন্ন প্রকশনায় ‘ফুলকলি’র কবরের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কবরটি সংরক্ষণের অভাবে এটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। খাগড়াছড়িতে পর্যটকরা বেড়াতে আসলেও অনেকের ‘ফুলকলি’র  ইতিহাস অজানা রয়ে যায়।

তবে দীর্ঘদিন পরে ‘ফুলকলি’র কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান,‘ পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের সাথে হাতির অভিন্ন সর্ম্পক রয়েছে। বিশেষ করে একসময়ে পিছিয়ে পরা জনপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিক গঠনের কারণে জেলা প্রশাসকরা পোষ্য হাতি ব্যবহার করত। ঐ সময়ে হাতির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ৯০ দশকের খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আনসার খান ‘ফুলকলি’র পিঠে চড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় যেত। ফুলকলি(হাতি) এর মৃত্যুর পর তিনি পরম মমতায় এটিকে সমাধিস্থ করে। সেই সমাধি সংরক্ষণে অভাবে এতদিন লোকচুক্ষ’র অন্তরালে ছিল। সেই ফুলকলির স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে হাতি ব্যবহারের ঐতিহ্য পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে তুলে ধরতে ‘ফুলকলির সমাধি সৌধ’ গড়ে তোলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে আগামী নভেম্বরের মধ্যে ‘ফুলকলি’র সমাধি সৌধ’ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এরপর এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হবে। নান্দনিক নির্মান শৈলী কারণে ফুলকলি’র ইতিহাসের পাঠের পাশাপাশি পর্যটকরা এখানে এসে মুগ্ধ হবে। ’

গত ২রা সেপ্টেম্বর ফুলকলি সমাধি সৌধ এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ফুলকলি সমাধি সৌধ নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে  গণর্পূত বিভাগ। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //