চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর আজ

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর আজ। ২০১৯ সালের আজকের এই দিন রাতে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ৭১ জন।

চকবাজার এলাকার স্থানীয় চুড়িহাট্টা মসজিদ সংলগ্ন আসগর লেন, নবকুমার দত্ত রোড এবং হায়দার বক্স লেনের ত্রিমুখী মিলনস্থলে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

এক বছর পেরিয়ে গেলেও আগুনের সঠিক উৎপত্তিস্থল ও কারণ এখনো ধোঁয়াশাই রয়েছে। সেদিনের সেই আগুনে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় স্থানীয় রাজ্জাক ভবন ও ওয়াহিদ ম্যানশন। আরো অন্তত তিনটি ভবনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় খাবার হোটেল, দোকানের মতো বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

আগুনে পুড়ে মারা যায় অনেকগুলো তাজা প্রাণ। পুরান ঢাকার চকবাজারে চুরিহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানশনের নিচে ‘এম আর টেলিকম সেন্টার’ নামে ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালাতেন মাসুদ আর মাহবুব। আগুন লাগলে দোকান থেকে বের হয়ে মাসুদ আর মাহবুব দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নিলেন পাশের গলিতে। সেখানেই অনেকের সঙ্গে দম বন্ধ হয়ে মারা যান এই দুই ভাই। 

চুড়িহাট্টার আগুন কেড়ে নিয়েছে নোয়াখালীর জাফর আহমেদকেও। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে যাওয়া মা বিবি হালিমা শিল্পী। 

ওই রাতের আগুনের শিকার রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন। চুড়িহাট্টায় দগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা তিনি। তারপর থেকে কামরাঙ্গীর চরে ছোট ছোট তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন অনোয়ারের স্ত্রী হাজেরা বেগম। খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে অনেকেই খুব মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না সরকারি সহযোগিতা। 

নোয়াখালির মৃত জাফর আহমেদের ছেলে রাকিব হোসেন রাজু বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে আমরা কিছু পাই নাই। কেবল লাশের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা, আর প্লাস্টিক সমিতি এক লাখ দিছে ঘর করার জন্য। শুনছিলাম তো অনেকেই অনেক কিছু দেবে, কিন্তু পরে আর কিছুই পাই নাই।’

একই কথা বলেছেন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া হালিমা শিল্পীর বোন। তিনি বলেন, ‘অন্য একটি পরিবারের আরেকজনের সঙ্গে তার বোন শিল্পীর মরদেহ মিলিয়ে ফেলা হয়। তারা ডিএনএ স্যাম্পল মিলিয়ে সেখান থেকে তার বোনের মরদেহ নিয়ে আসেন। আর এই পুরো প্রক্রিয়াতে সময় চলে যায় অনেক। ডেথ সার্টিফিকেট সময় মতো না পাওয়ার কারণে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের অনুদান বা সাহায্য সহযোগিতা আমরা পাইনি, কেবল পেয়েছি আশ্বাস।’

আগুন লাগার পর ঢাকা ও এর আশেপাশের ১৩টি ফায়ার স্টেশনের অন্তত ৩৭টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং প্লাস্টিক পণ্য আগুনের শিখা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।

পুরান ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রাণ হারান ১২৩ জন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, পুরান ঢাকার এসব কেমিক্যাল কারখানা দ্রুত সরিয়ে নেয়া হবে। 

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি একই অঞ্চলের চুড়িহাট্টায় পারফিউমের কারখানা ও গোডাউনে অগ্নিদুর্ঘটনায় ফের প্রাণ হারান আরো ৭১ জন। এবারো সরকার বলেছিলো, পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল কারখানা থাকবে না। 

কারণ এই কেমিক্যালের গুদাম পুরান ঢাকাকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। কিন্তু দশ বছর পেরিয়ে গেছে। ভয়ংকর দাহ্য এসব কারখানা এখনো সরেনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //