চাকরিজীবীদের আয়করের হিসাব–নিকাশ

দেশের শিক্ষিত তরুণেরা বড় বড় বেসরকারি কোম্পানিতে মোটা বেতনে চাকরি করেন। সচ্ছল জীবন যাপন করেন তারা। দামি ফ্ল্যাটে থাকেন। অনেকেই অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেন। বছর শেষে তাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে হয়। শুধু চাকরির আয়ের ওপর নির্ভরশীল এই চাকুরেদের সব আয়ের ওপর কর দিতে হবে, তা নয়। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, বড় ধরনের সার্জারি ও যাতায়াত ভাতায় বেশ ছাড় আছে।

আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক রিটার্ন দেওয়া যাবে। চাইলে চাকরিজীবীরা এখনই রিটার্ন দিতে পারবেন। তাই হিসাব-নিকাশে বসে যান। বেসরকারি খাতের নির্বাহী পর্যায়ের সবার রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। তা না হলে যে প্রতিষ্ঠান আপনাকে বেতন দেয়, তা তারা খরচ হিসেবে দেখাতে পারবে না।

এবার দেখা যাক, কোথায় কত কর ছাড় আছে। আপনার ১২ মাসের মূল বেতন হলো মূল আয়। পুরোটাই করযোগ্য। এছাড়া বাড়িভাড়ায় মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বা মাসে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, তা করমুক্ত থাকবে। আর চিকিৎসা ভাতায় মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, তা করমুক্ত। হার্ট, কিডনি, চক্ষু, লিভার, ক্যানসারের মতো বড় ধরনের অপারেশনের খরচ পুরোটাই করমুক্ত। আর বছরে যাতায়াত ভাতা হিসেবে অফিস থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেলে তা করমুক্ত থাকবে। এর বেশি যাতায়াত ভাতা পেলে তার ওপর কর বসবে। আপনার প্রতিষ্ঠান যদি আপনাকে ব্যবহারের জন্য গাড়ি দেয়, তাহলে গাড়ির খরচ বাবদ মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা বার্ষিক ৬০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি হবে, তা সরাসরি নিট করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকরি করেন কামরুন নাহার। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিনি প্রতি মাসে মূল বেতন বাবদ পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। এর মানে বছরে ছয় লাখ টাকা মূল বেতন। বছরে ২টি উৎসব ভাতা পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা করে আরও ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাড়িভাড়া হিসেবে মাসে ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন, তাতে বছরে মোট বাড়িভাড়া হলো ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যাতায়াত সুবিধার জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে বছরে ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর চিকিৎসা ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে বছরে ২৪ হাজার টাকা পেয়েছেন। এর বাইরে কামরুন নাহারের আর কোনো আয় নেই। সংসার খরচ চালিয়ে সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোথাও বিনিয়োগও করতে পারেননি।

কামরুন নাহারের সারা বছরের মূল বেতন, উৎসব ভাতাসহ সাত লাখ টাকার পুরোটাই করযোগ্য। যেহেতু মূল বেতনের অর্ধেকও বাড়িভাড়া পাননি, তাই বাড়িভাড়ার ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করমুক্ত। যাতায়াতে বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত, কিন্তু কামরুন নাহার ৬০ হাজার পেয়েছেন। তাই তাঁর যাতায়াতের ৩০ হাজার টাকা করযোগ্য। নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসা ভাতার টাকাও করমুক্ত থাকবে। আর যেহেতু ওই করবর্ষে বড় ধরনের কোনো অপারেশন করতে হয়নি, তাই খরচও হয়নি।

সব মিলিয়ে কামরুন নাহারের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ২৪ হাজার টাকা হলেও মূলত কর বসবে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপর। এর মধ্যে প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিভিন্ন হারে কর বসবে। যেমন প্রথম ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে ৫ হাজার টাকা এবং বাকি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার ১০ শতাংশ হারে ২৮ হাজার টাকা কর বসবে। সব মিলিয়ে কামরুন নাহারের মোট করের পরিমাণ হবে ৩৩ হাজার টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //