টেস্টে উন্নতি ও বাংলাদেশের ক্রিকেট অবকাঠামো

২০০০ সাল থেকে সময়ের হিসেবে দুই যুগ চলছে। সে বছরের ২৬ জুন দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট খেলতে নামে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি চার দিনে শেষ হলেও আশা বেঁধে ছিল ভবিষ্যতের। কিন্তু দুই যুগেও বলার মতো উন্নতি হয়নি লাল বলের ক্রিকেটে। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্ট হেরে নিজেদেরকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে টাইগার ক্রিকেটাররা। ৩২৮ ও ১৯২ রানের বড় দুটি পরাজয় চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এখনো শেখার পর্যায়েই রয়েছে তারা। 

২০১৯ সালে কিছু সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সব ক্রিকেটার। কিন্তু উন্নতি হয়নি পারফরম্যান্স আর গুরুত্বে। কারণ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের কাছে লংগার ভার্সনের লিগ কখনোই গুরুত্ব পায় না। কারও কারও কাছে তো এই লিগের নাম হয়ে গিয়েছিল পিকনিক লিগ। অথচ একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অবকাঠামো যতটা পোক্ত থাকা প্রয়োজন তার ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশ। ভারতে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখার জন্য সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয় থাকে রঞ্জি ট্রফিতে খেলা। শ্রেয়াস আইয়ারের মতো সর্বশেষ বিশ্বকাপে দারুণ খেলা ক্রিকেটারকে চুক্তিতে রাখা হয়নি এই লিগে না খেলার কারণে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি কোথায় তা কমবেশি সবারই জানা। প্রথম শ্রেণির দুই আসর-জাতীয় লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ আয়োজন করা হয় তাই অনেকটা অগোচরে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কাছে লিগের গুরুত্ব কতটা সেটা পারফরম্যান্সেই সহজে অনুমেয়।

কয়েক মাস আগে টেস্ট দল গড়তে মানসম্পন্ন ক্রিকেটার না পাওয়ার কথা নির্বাচকরা স্বীকার করে নিয়েছেন। যার প্রমাণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া গেল। জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, শাহাদাত হোসেনরা বারবারই লাল বলে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের ব্যাক-আপ ক্রিকেটার যে খুব বেশি নেই সেটা বারবার সুযোগ পাওয়াই প্রমাণ করে। সর্বশেষ ছয় ইনিংস দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে ব্যাটাররা দলে কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। যার মধ্যে টানা পাঁচ ইনিংসে দুইশর আগে অলআউট হয় বাংলাদেশ! ১৮০, ১৩৯, ১৮৮, ১৮২, ১৭৮, ৩১৮ টেস্টে টানা ছয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র। সবগুলোই আবার ঘরের মাটিতে। শেষের চারটি স্কোর আবার সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাজে ব্যাটিংয়ের মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকদের অভিমত, অপরিকল্পিত ঘরোয়া ক্রিকেটের ভয়ঙ্কর পরিণাম এই পারফরম্যান্স। টেস্ট ক্রিকেটে পায়ের তলায় শক্ত মাটিই যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ ১২ ম্যাচের সাতটিতেই হেরে প্রমাণও দিয়েছে বাংলাদেশ। সাফল্য বলতে তিনটিতে জয় ও একটি ড্র। 

২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে ১৪২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ মাত্র ১৯টিতে জয় পেয়েছে, ১৮টি ড্র আর ১০৫টি ম্যাচে হার। বলার অপেক্ষা রাখে না, গেল ২৪ বছরে সাদা পোশাকে যে উন্নতি করার কথা ছিল তার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি টাইগাররা। যতবার দল টেস্ট হারে ততবারই আলোচনায় উঠে আসে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা নিয়ে। সেটাই মনে করিয়ে দিয়ে সেরা টেস্ট ব্যাটার ও সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ বলেন, ‘সত্যটা শুনলে হয়তো অনেকের খারাপ লাগতে পারে। কারণ আমাদের ডমেস্টিক ক্রিকেট আর ইন্টারন্যাশনাল টেস্ট ম্যাচ খেলা অনেক ডিফারেন্ট। এখানে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।’ 

টেস্ট হারের পর আলোচনা হলেও দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যে ধীরে ধীরে মান হারিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশিরভাগ সময়ই দেশের তারকা ক্রিকেটাররা চারদিনের এই আসরে খেলতে চান না। সাকিব আল হাসানকে তো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলানোই যায় না। যারা খেলে তাদেরও খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। 

টেস্ট খেলার মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হলে নজর দিতে হবে লংগার ভার্সন ক্রিকেটে। কিছু প্রস্তাবনাও এরই মধ্যে বিসিবির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে-জাতীয় ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক, ম্যাচ ফি বাড়ানো, ভালোমানের উইকেট তৈরি করা, উন্নত আর আধুনিক কোচিং স্টাফ, হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে চালু, ম্যাচের সংখ্যা বাড়ানো, দলগঠনের পদ্ধতি পরিবর্তন, আধুনিক অনুশীলনের সুবিধা, পিছিয়ে থাকা বিভাগগুলোর দিকে আলাদা নজর দেওয়া অন্যতম। এ ছাড়া চার দিনের ম্যাচকে পরিবর্তন করে পাঁচ দিন করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। মোদ্দকথা টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি হলে তার প্রভাব ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও পড়বে, দায়িত্ব নিতে হবে বিসিবিকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //