জাতীয় দলে দেশি কোচ সুযোগ মিলবে কবে

বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষে অনেক দেশই কোচিং স্টাফে পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশের জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়েছেন বেশ কয়েকজন। শূন্যপদে অনেকেই আবেদন করেছেন। সেখানে বিদেশিদের সম্ভাবনা থাকলেও দেশিদের অবস্থা রয়ে গেছে আগের মতোই। তুষার ইমরান ব্যাটিং কোচের পদে আবেদন করলেও সময় শেষে করেছেন বলে তার আবেদনটি বাতিল করা হয়। এর বাইরে অনেকের সুযোগ থাকলেও দলের কোচিং স্টাফের সদস্য হতে অনীহার কারণেই হতাশ হতে হয়েছে। 

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর দেশের ক্রিকেটের কোচিং স্টাফ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে নিজেদের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বাজে ক্রিকেট খেলে সাকিব-মুশফিকরা চরমভাবে হতাশ করেছেন। পুরো আসরে মাত্র ২ জয় নিয়ে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলে একাধিক পদ আছে শূন্য অবস্থায়। ব্যাটিং কোচের পদে আবেদন করেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল, নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ব্যাটার রস টেলর। এই পদেই তুষার আবেদন করেছিলেন। পেস বোলিং কোচ পদে শন টেইট, কলি করিমোরও আবেদন করেছেন। দেশিদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করা মাহবুব আল জাকিও আবেদনকারীর তালিকায় রয়েছেন। 

নাম চূড়ান্ত না হওয়ায় কে কে নিয়োগ পাচ্ছেন সেটা বলা যাচ্ছে না। আবেদনকারীদের মধ্যে টেলর ও টেইটকে না পাওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সে হিসেবে বড় কোনো নাম কোচিং প্যানেলে যুক্ত হচ্ছে না। ব্যাটিং কোচ হিসেবে লঙ্কান থিলান সামারাবিরা আবারও আসতে পারেন। সবকিছু মিলিয়ে দেশিদের কেউ আবারও সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এটা একরকম নিশ্চিতই বলা যায়। জাতীয় দলে নিজ দেশের সাবেকদের সুযোগ কবে মিলবে সেই প্রশ্ন ক্রিকেটাঙ্গনে কান পাতলে শোনা যায়। তবে আশার কথা, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সাতটি দলের সবগুলোরই প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশিরা। যা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রথমবার ঘটেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, দুর্দান্ত ঢাকার খালেদ মাহমুদ সুজন, রংপুর রাইডার্সের সোহেল ইসলাম, সিলেট স্ট্রাইকার্সের রাজিন সালেহ, খুলনা টাইগার্সের তালহা জুবায়ের, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তুষার ইমরান ও ফরচুন বরিশালের মিজানুর রহমান বাবুল মাঠের বাইরে থেকে দলকে পরিচালনা করছেন। 

ঘরোয়া আসরগুলোতে বিভিন্ন দলের দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করার পুরস্কারই এবার পেয়েছেন তারা। অথচ বিপিএলে গত দুই-তিন সংস্করণ আগেও বিদেশি কোচদের দাপট দেখা গেছে। ২০২২ সালের সর্বশেষ আসরে ছয়টি ফ্যাঞ্চাইজির মধ্যে সমান তিনটি করে দেশি-বিদেশি কোচ ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৯-২০ বিপিএলে বিসিবির তত্ত্বাবধানে দল সাজিয়ে দেওয়া আসরেও ছয় দলের পাঁচটির কোচ ছিলেন বিদেশি! বিদেশিদের ভিড়ে বিপিএলে প্রতিবারই দলকে কোচিং করানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন সালাউদ্দিন, রয়েছেন এবারও। অথচ তিনিই জাতীয় দলে দীর্ঘদিন সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারের আসরের কোচদের মধ্যে বিভিন্ন সময় খালেদ মাহমুদ সুজন, সোহেল ইসলাম, রাজিন সালেহ ও মিজানুর রহমান বাবুল জাতীয় দলের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অথচ যত দিন যাচ্ছে এই ছবিটাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের কোচ রাজিন সালেহ বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে দায়িত্ব পালন করা আমরা যারা দেশি কোচরা রয়েছি তারা নিজের যোগ্যতা দিয়েই কাজ করছি। আমিসহ যারা এবারে বিপিএলে কোচ রয়েছি তারা তো জাতীয় দলের জন্য স্বপ্ন দেখতেই পারি। আমি হতাশ নই, আশা করি নিজের কাজের মূল্যায়ন পাব।’ মূলত হতাশা থেকেই জাতীয় দলের কোচ হতে চান না দেশিরা। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মতো সাবেক অধিনায়ক জাতীয় দলে ডাক পান না বলে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ করেছেন। তবে এবারের বিপিএলে সাত দলের দেশি কোচরা অবস্থার পরিবর্তন হবে আর জাতীয় দলে নিজের অভিজ্ঞতা মেলে ধরার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেই অপেক্ষায় রয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //