বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজ

ঢাকা টেস্টে চালকের আসনে বাংলাদেশ

ঢাকা টেস্টে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন দুই সেশন ব্যাটিংয়ে দাপট দেখিয়ে শেষ সেশনে রাজত্ব করেছেন বোলাররা। শুরুতে ১৫৫ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে আয়ারল্যান্ড। ইনিংস হার এড়াতে প্রয়োজন ১২৮ রান।     

প্রথম দিনের শেষটা মন মতো হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় দিনের শুরুটাও হয়েছে নড়বড়ে। তবে মুমিনুল হকের দ্রুত বিদায়ের প্রভাব দলে পড়তে দেননি সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাটে প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। ৩৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ১৭০। এই সেশনে স্কোরবোর্ড ১৩৬ রান যোগ করেছে সাকিববাহিনী।

৩৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করা বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। মার্ক অ্যাডায়ারের লেগ স্টাম্প তাক করে করা এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন মুমিনুল। ৩৪ বলে চারটি চারে ১৭ রান করেন তিনি। এরপর ক্রিজে গিয়েই প্রথম বলে চারে শুরু করেন অধিনায়ক সাকিব।

দলকে বিপদমুক্ত করার সঙ্গে মুশফিককে নিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন সাকিব-মুশফিক। উল্টো আইরিশদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান সাকিব এছাড়া।অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনকে সুইপ করে চাপ মারার পর রিভার্স সুইপ করে আরেকটি বাউন্ডারির দেখা পান মুশফিক। অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের জুটির রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ।

এর আগের ওভারে কার্টিস ক্যাম্পারকে দুটি চার মারেন অধিনায়ক সাকিব। প্রথম ঘণ্টায় ওভারপ্রতি ৫ রানের বেশি করে তোলে বাংলাদেশ। সাকিব-মুশফিকের জুটি রান রেট ছিল ৬ ছুঁইছুঁই। দলকে একশোর ঘরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভারে ৭৩ রান স্কোরবোর্ডে তোলেন দুজন।

ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পথ ধরে ৪৫ বলেই হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন সাকিব। বেন হোয়াইটকে থার্ড ম্যান দিয়ে চার মারার পর লং অন দিয়ে মারেন আরেকটি। তাতেই পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের ৩১তম পঞ্চাশে। এই সময়ে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে নয়টি চার।

সাকিবের পর মুশফিকও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। দুজনের ব্যাটে দল পৌঁছে যায় দেড়শ রানে। এরপর আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৭০ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে আর মাত্র ১৩ রান যোগ করতেই ম্যাকব্রাইনের বলে সুইপ করতে গিয়ে লর্কান টাকারের তালুবন্দি হন সাকিব।

সঙ্গী হারালেও ছয়ে নামা লিটন দাসকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক। দেখে শুনে খেলে আইরিশ বোলারদের  মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অবশেষে মুশফিক পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে। অ্যাডায়ার বল খোঁচা মেরে কিপার ও স্লিপের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার।

এক পাশে মুশফিক মাইলফলকে পৌঁছালে লিটনও ছুঁটছিলেন হাফ সেঞ্চুরির পথে। গ্যাপ শট খেলে একে একে ৮টি বাউন্ডারি হাঁকালেও শেষ পর্যন্ত রান আউটে জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। সামনে এগিয়ে মারতে গিয়ে ৪৩ রানে ক্যাচ আউট হন তিনি। এরপর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে চা বিরতিতে যান মুশফিক।  

বিরতির পর নেমে আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ১২৬ রানে ক্যাচ আউট হন মুশফিক। মেহেদি হাসান একপ্রান্তে লড়াই চালিয়ে গেলেও নিচের সারির ব্যাটাররা ছিলেন আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত। ম্যাকব্রাইনের ঘূর্ণিতে ৩৬৯ রানে শেষ পর্যন্ত অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ।

জবাবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই আয়ারল্যান্ডকে চেপে ধরেন সাকিব। বোলিংয়ে এসে ইনিংসের প্রথম ওভারেই তুলে নেন জেমস ম্যাককলামকে। শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে সেটা সামনে ওঠার আগে তাইজুলের থাবায় দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে বসে আইরিশরা।

মুরে কমিন্সকে এক রানে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন এই স্পিনার। এরপর আবার দলীয় ৮ রানে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নিকে বোল্ড করেন এই স্পিনার। ৩ রানে আইরিশ দলপতি ফিরে গেলে কার্টিস ক্যাম্ফারকেও বিদায় করেন সাকিব।

১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা আয়ারল্যান্ডকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন হ্যারি ট্যাক্টর ও পিটার মুর। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করে আইরিশরা। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব ও তাইজুল। ট্যাক্টর ৮ ও মুর ১০ রানে অপরাজিত আছেন। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
আয়ারল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ২১৪/১০ (৭৭.২ ওভার) (ট্যাক্টর ৫০, টাকার ৩৭; তাইজুল ৫/৫৮)
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩৬৯ অল আউট (৮০.৩ ওভার) (মুশফিক ১২৬, সাকিব ৮৭, মিরাজ ৫৫*; ম্যাকব্রাইন ৬/১১৮)
আয়ারল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৭/৪ (১৭ ওভার) (মুর  ১০*, টেক্টর ৮*; সাকিব ২/১১, তাইজুল ২/৭)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //