লজ্জাজনক হার: সমালোচনায় চিন্তিত নন মুমিনুল

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ লজ্জাজনকভাবে হারের কারণে নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনার মুখে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুলের হক। কিন্তু এমন সমালোচনায় চিন্তিত নন মুমিনুল।

টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুলের অধীনে ১৫টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে মাত্র তিনটি ম্যাচ। এরমধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়টি ছিলো ঐতিহাসিক। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট পারফরমেন্সের চিত্র অনুসারে নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে জয়টি ছিল দ্বৈবাত।

মুমিনুলের অধীনে বাংলাদেশ এমন কিছু টেস্ট হেরেছে যেগুলোতে জয়ের দিক দিয়ে ফেভারিট ছিলো টাাইগাররা। গত বছর ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঐ দুটি টেস্ট জয়ের দারুণ সুযোগ ছিলো টাইগারদের। 

সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেও এমন ঘটনা ঘটেছে। শীর্ষস্থানীয় সাতজন সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেছিলো প্রোটিয়ারা। প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিলো বাংলাদেশ। তাই টেস্ট সিরিজও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলো তারা।

কিন্তু টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। দুই প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ এবং সাইমন হার্মার, দুইজনে একত্রে ৪০টির মধ্যে ২৯টি উইকেট নিয়েছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি মুমিনুল। দুই টেস্টে মাত্র ১৩ রান করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরা প্রথম বহরের সদস্য হিসেবে আজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন মুমিনুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘ফলাফল এনে দিতে না পারলে বিশ্বেও যেকোনো  অধিনায়ককে চাপে ফেলবে, সমস্যায় ফেলবে। রুটের দিকে তাকান (জো রুট, ইংল্যান্ডের অধিনায়ক), সে ইতিমধ্যে সাতটির মধ্যে ছয়টি সেঞ্চুরি করেছে। কিন্তু দল জিততে না পারায়, প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছেন তিনি।’

বৃহস্পতিবার যথাক্রমে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে এবং বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বহরের খেলোয়াড়রা দেশে ফিরবেন।

মুমিনুল বলেন, ‘অধিনায়কত্ব এমন একটি জিনিস, যদি আপনি পারফর্ম করতে না পারেন তবে চাপ আপনাকে আঁকড়ে ধরবে। আর ঐ ধরনের চাপ নেয়ার মত মানসিকতা থাকতে হবে। তাই এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি আমি। তাই আমাকে চাপ নিতে হবে।’

২০১৯ সালে অধিনায়কত্ব নেয়ার পর ১৫ টেস্টে ৩৪ দশমিক ৬৫ গড়ে ৯০১ রান করেছেন মোমিনুল। অধিনায়ক হবার আগে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৪১ দশমকি ৪৭। মুমিনুলের গড় পরে যাওয়ায়, বুঝা যাচ্ছে, অধিনায়কত্বের চাপ ব্যাটিংয়েও প্রভাব ফেলছে।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারনা ছিল নিজের পারফরমেন্স দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করতে পারবেন মুমিনুল। কিন্তু দিন-দিন উদ্বেগজনক হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের পারফরমেন্স।

তবে মুমিনুল জানান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর টেস্ট দলকে নিয়ে প্রত্যাশা অনেকখানি বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রত্যাশা বেশি ছিল। আপনারা ভেবেছিলেন, নিউজিল্যান্ডে জয়ের পর আমরা এক নম্বর দল হয়ে গেছি। কিন্তু এটা একটা ভুল চিন্তা। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল কিন্তু টেস্টে বাংলাদেশ কখনোই ভারসাম্যপূর্ণ দল ছিলো না। তাই আপনি যা বলেছেন, তা ঠিক নয়, এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। তবে আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি, যা একটি  ইতিবাচক দিক। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের কথা বললে, উন্নতির শেষ নেই। টেস্ট ওয়ানডে ক্রিকেটের মতো নয়। এটা পাঁচ দিনের ক্রিকেট এবং আপনাকে পাঁচ দিন, সব বিভাগেই ভালো করতে হবে। আপনাকে সেশন জিততে হবে।’

মুমিনুল আরো মনে করেন, ‘ফল যাই হোক না কেন, শেখার এবং উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। আমাদের জানতে হবে, কিভাবে প্রতিটি সেশনে প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য বিস্তার করা যায়। কিভাবে বাজে পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসা যায়, কিভাবে নতুন বল এবং পুরনো বলে বোলিং করতে হয়। আমরা প্রতিটি সিরিজ থেকে শিখছি এবং আমাদের সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে। আমাদের জানতে হবে, কিভাবে ভালোভাবে আমাদের পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //