সৌম্য সরকার ব্যাট করতে কি ভুলে গেছেন?

ক্রিকেট দর্শকদের অনেকে বলছেন, সৌম্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রতি ম্যাচেই এমনভাবে আউট হয়েছেন যেন তিনি ব্যাট করতেই ভুলে গেছেন। ২, ০, ২, ৮- অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচে সৌম্য সরকারের রান এমন।  

সৌম্য সরকারের এই ব্যাটিং প্রদর্শনীর কারণ মানসিক চাপ বলছেন, বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের মেন্টর নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

বিভিন্ন পর্যায়ে কোচিং করানো এই কোচ বলেন, সৌম্য সরকারের ব্যর্থতা মাথায় জেঁকে বসেছে, এটা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না সে।

ঠিক অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগেই সৌম্য সরকার নিয়মিত পারফর্ম করছিলেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, ২০১৯ সালে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সফরে দুই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ রান করেন সৌম্য সরকার, চলতি বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২৭ বলে ৫১ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি, এছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে হওয়া সিরিজে সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার পান সৌম্য।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমেই যেন ব্যাটিং ভুলে গেলেন সৌম্য সরকার।

প্রথম ম্যাচে সৌম্য সরে গিয়ে বল মারতে গেলে অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার জশ হ্যাজলউড শরীর বরাবর বল করেন, সেই লাইনের বল কাট করে তিনি স্ট্যাম্পে নিয়ে যান, ফলাফল বোল্ড আউট।

দ্বিতীয় ম্যাচে মিচেল স্টার্কের বলের লাইন মিস করেন সৌম্য সরকার, আড়াআড়িভাবে লেগে মারতে গিয়ে ব্যাট মিস করে বল সোজা স্ট্যাম্পে, ফলাফল বোল্ড আউট।

তৃতীয় ম্যাচে কোন রান না করেই ফিরে যেতে পারতেন, লেগ সাইডে তুলে মারা শটটা ৩০ গজ বৃত্তের ভেতরে থাকা ফিল্ডার লাফ দিয়ে কেবল স্পর্শ করেন কিন্তু ধরতে পারেননি, তবে এই জীবন কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য, এবারে তিনি ১০ বল খেলে ১১ নম্বর বলে অ্যাডাম জাম্পার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন, পিচের ওপরের দিকে আসা বলটিতে তিনি সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন।

চতুর্থ ম্যাচে সৌম্য সরকার নিজের জায়গামতো বল পেয়েও আউট হয়ে যান, জশ হ্যাজলউডের শর্ট বল লেগ সাইডে তুলে মারতে গিয়ে ওপরে তুলে দেন, অফে চলে যায় বল বৃত্তের ভেতরেই ক্যাচ আউট।

আউট হওয়ার চেয়েও আউটের ধরণ নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বেশি, তাও পরপর চারটি ম্যাচে।

বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসি বলেন, সৌম্য সরকার কখনোই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারেননি। যখন ভালো খেলেন খুব ভালো খেলেন, আবার কিছুদিন ফ্লপ যান।

তবে তিনি বলেন, সৌম্য সরকারের সমস্যাটা ক্রিকেটীয় না, টেকনিক বা ব্যাটিংয়ে সমস্যা থাকলে অন্য কোথাও ভালো করতে পারতেন না বলছেন তিনি, এটা তার মানসিক বাধা যা তাকে নিয়মিত ভালো করতে দিচ্ছে না।

মিস জেসি বলেন, সৌম্যর মধ্যে একটা সন্তুষ্টি চলে আসে মনে হয়, যে ভালো খেলে ফেলেছি। আবার সৌম্য চাপে পড়ে তখন সে যদি রান করে আবার তাকে নিয়ে সমালোচনা বন্ধ হয়।

এই বিশ্লেষক মনে করেন কেউ যদি পাঁচ ম্যাচে পাঁচটা সেঞ্চুরিও করেন তবু রানের ক্ষুধা থাকাটা জরুরি, তবেই একজন ব্যাটসম্যান ভালো থেকে গ্রেট ব্যাটসম্যান হয়ে উঠতে পারবেন।

তবে পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সৌম্য সরকার বাংলাদেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাইরেই ব্যাট হাতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যেমন ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর পর্যন্ত টানা সবগুলো ম্যাচে রান পেয়েছেন সৌম্য সরকার এবং প্রতিটি ইনিংসে ১৫০ থেকে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন।

গতিময় উইকেটের গড় হিসেব করলে সৌম্য সরকারের রান দাঁড়ায় প্রতি ম্যাচে ২৬, যেখানে দেশের মাটিতে রান করেছেন ১৮ করে।

নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, কন্ডিশন অবশ্যই একটা ব্যাপার, সাথে নিজের ওপর আস্থাহীনতাও আছে সৌম্য সরকারের। একবার ব্যর্থ হলে, সেটা মেনে নেয়া, সেটার মুখোমুখি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

সৌম্য সরকার যে সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসেন, তখন তাকে অন্যতম সেরা তরুণ ক্রিকেটার মনে করা হতো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত সৌম্য বাংলাদেশের সেরা পাঁচজনের একজন।

এক হাজার রান পূর্ণ করা পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন তিনি। এই পাঁচজনের মধ্যে রান তোলার গতিতেও সবার ওপরে তিনি।

সৌম্য সরকার নিয়মিত বিরতিতেই বলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রানের ইনিংস খেলতে পারেন, অর্থাৎ ২০০ এর মতো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

বাংলাদেশের হয়ে গত দশকে যেসব তরুণ ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন তাদের মধ্যে সৌম্য সরকার ও মুস্তাফিজুর রহমানই দলে নিজেদের অবস্থান পাকা করেছেন সবার আগে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //