বিরতিই টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির অন্তরায়

‘বনেদি’ হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে। যদিও মাত্র ১২টি দেশ বর্তমানে পাঁচ দিনের ক্রিকেট খেলছে, যার মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি দেশ অনেকটাই অনিয়মিত খেলে থাকে। বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশ যখন মাঠের ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক সে সময় বাংলাদেশের অপেক্ষা বেড়েই চলেছে।

বিশেষ করে অনেক নাটকীয়তার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। কারণ হিসেবে শুধু কোয়ারেন্টিনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে করোনা পরীক্ষা করে শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার পরও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। বাংলাদেশ এতে রাজি হয়নি। সেখানে ভালো করলে হয়তো র‌্যাংকিংয়ে আফগানিস্তানের পেছনে পড়ে থাকতে হতো না।

যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির র‌্যাংকিং পদ্ধতিটিকে ভুল প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের এক সাংবাদিক। শুরুতে সেরা দশের মধ্যে শেষে ছিল টাইগারদের নাম। নয় নম্বরে আফগানদের রাখা হলেও ক্রিকেট বন্ধ থাকার কারণে ছিল না জিম্বাবুয়ে। পরে ভুল সংশোধন করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় আগের সেই নয় নম্বর স্থানে। আপাতত রশিদ খানের দলের জায়গা হয়নি র‌্যাংকিংয়ে।

বাংলাদেশের জন্য এটি স্বস্তির খবর হলেও আশা জাগানিয়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও প্রভূত উন্নতিটা এখনো করতে পারেনি নাইমুর রহমান দুর্জয়ের উত্তরসূরিরা, যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, দীর্ঘ বিরতি দিয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলা। ক্রিকেট কূটনীতিতে পিছিয়ে পড়ে বারবারই এমনটি হচ্ছে। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে নিজেদের দাবি দাওয়া-আদায় করার ব্যপারে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

বিষয়টিকে পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘টেস্টে আমাদের উন্নতি হয়নি এমনটি বলা যাবে না। তবে নিয়মিত টেস্ট ম্যাচ না খেলাটাই হতাশার সবচেয়ে বড় কারণ বলে আমার কাছে মনে হয়।’। যদিও গত দুই মাসে দুটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলেছে ক্রিকেটাররা। দুটি টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সমান তালে পারফর্ম করেছে তরুণ ক্রিকেটাররা। এরপরেও চিন্তিত বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটটা সব সময়ই কঠিন। প্রতিপক্ষ সহজ বলে কিছু নেই এখানে। এতদিন বিরতি থাকার পর মাঠে ফিরে আসা, হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড় আছে; কিন্তু ওদের ফর্ম নিয়েও আমরা অনেক চিন্তায় আছি।’ 

আকরামের মতো অনেক সাবেক ক্রিকেটারের দুশ্চিন্তা শুধু ফর্ম নিয়েই নয়। দীর্ঘ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে মানিয়ে নিতে কত সময় লাগবে সেটা নিয়েও। বাংলাদেশ সফরে খর্ব শক্তির দল পাঠিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত কয়েকটি সিরিজ ধরেই জৈব সুরক্ষা বলয়ের ভেতর ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। দীর্ঘ দিন জৈব সুরক্ষায় থাকার ধকল ও করোনার ভয়ে এই সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার।

তবে প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতার দিকে না তাকিয়ে নিজ দল নিয়েই ভাবার তাগিদ দিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণের জন্য এবারের সিরিজটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সেখানে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সিরিজ জিতেই প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত দল। আর দীর্ঘ বিরতি না দিয়ে নিয়মিত টেস্ট খেলার জন্য ক্রিকেট কূটনীতি জোরদার করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //