রাজশাহীর কাছে হেরে গেলো মুশফিকের ঢাকা

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ও বেক্সিমকো ঢাকা। এই ম্যাচে ঢাকা টস জিতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় রাজশাহীকে। মুশফিকদের বিরুদ্ধে ১৭০ রানের বড় সংগ্রহ করে মাত্র দুই রানে জয় পায় রাজশাহী।

ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত আর আনিসুল হক ইমনের ব্যাটে শুরুটা দারুণ হয় রাজশাহীর। শান্ত ধীরে খেললেও ইমনের ব্যাটে রান আসে দ্রুত। রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত দুই ছয়ে ১৭(১৬) রান করে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন নাসুম আহমেদের বলে।

দুই নম্বরে ব্যাট করতে নেমে রনি তালুকদার ফেরেন ৮ বলে ৬ রান করে মুক্তার আলীর বলে ক্যাচ দিয়ে। এরপর ব্যাট করতে আসেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে হতাশ করেন তিনিও। ৮ বলে ৫ রান করা আশরাফুল মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন মুক্তার আলীর হাতে।

একপ্রান্ত আগলে রাখা ইমনও খেই হারান দলীয় ৬৫ রানের সময়। ২৩ বলে ৫ চার ও এক ছয়ে ২৩  বলে ৩৫ রান তুলে বিদায় নেন নাঈম হাসানের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে।

পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ফজলে রাব্বী রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। এরপর লম্বা জুটি গড়েন নুরুল হাসান সোহান ও শেখ মেহেদী হাসান।

মেহেদীর একের পর এক বাউন্ডারিতে রান আসতে থাকে দ্রুত। মেহেদীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোহানও রান তুলতে থাকেন দ্রুত। দুজনের জুটি লম্বা হয় ৯২ রানের।

সোহান ২০ বলে ২ চার, ৩ ছয়ে ৩৯ রান করে ফেরেন মুক্তার আলীর বলে ক্যাচ দিয়ে। তবে মেহেদী হাসান রানা তুলে নেন আসরের প্রথম অর্ধশতক। ৩২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছয়ে ৫০ রান করে সাজঘরে ফেরেন মেহেদী হাসান রানার বলে ক্যাচ দিয়ে।

শেষ দিকে ফরহাদ রেজার অপরাজিত ১১ (৬) রানে ভর করে ৯উইকেটে ১৬৯ রান তুলে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী।  ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মুক্তার আলী। এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন রানা, নাসুম আহমেদ ও নাঈম হাসান।

জয়ের জন্য ১৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই মেহেদি হাসানের অফস্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ইনসাইড আউট শটে এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান বিশ্বজয়ী যুব দলের বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। পরের ওভারে এবাদত হোসেনকে পরপর দুই বলে হাঁকান চার ও ছক্কা। তরুণ ওপেনারের এমন শুরুতে ইতিবাচক বার্তাই যায় ঢাকার ডাগআউটে।

কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি জুনিয়র তামিম। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে দুর্ভাগ্যবশত রানআউটে কাটা পড়েন। রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল শান্ত সরাসরি থ্রো'তে বিদায়ঘণ্টা বাজান ১১ বলে ১৮ রান করা তানজিদ তামিমের। হতাশ করেন আরেক ওপেনার ইয়াসির আলি রাব্বি। পঞ্চম ওভারে ফেরার আগে দুই চারের মারে ৮ বলে করেন ৯ রান।

তবে তিন নম্বরে নামা নাইম শেখ আবার আশা জাগিয়েছিলেন বড় কিছুর। মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ ও এবাদত হোসেনকে দৃষ্টিনন্দন দুইটি ছক্কা হাঁকান নাইম। দুজনের ওভারেই হাঁকান একটি করে চার। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে সীমানাছাড়া করতে পারেননি তিনি, ধরা পড়ে যান মিডউইকেটে দাঁড়ানো রনি তালুকদারের হাতে। দলীয় ৫৫ রানের মাথায় তিনি ফিরে যান ১৭ বলে দুইটি করে চার-ছয়ের মারে ২৬ রান করে।

চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও বিশ্বজয়ী যুব দলের অধিনায়ক আকবর আলি। দুজন মিলে ৫৩ বলে যোগ করেন ৭১ রান। আকবর-মুশফিকের জুটিতে জয়ের পথে এগুচ্ছিল ঢাকা। শেষের পাঁচ ওভারে তাদের করতে হতো ৪৭ রান। রানের চাপ যেন পেয়ে বসে আকবরের ওপর, ফরহাদ রেজার করা ১৬তম ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন মুগ্ধর হাতে। আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৪ রান।

আকবর ফিরে গেলেও মুশফিক উইকেটে থাকায় চিন্তার কারণ ছিল না ঢাকার। পঞ্চম উইকেটে তার সঙ্গী হয়ে আসেন সাব্বির রহমান। কিন্তু সাব্বিরকে নিয়ে বেশিক্ষণ খেলতে পারেননি মুশফিক। এবাদতের স্লোয়ার ডেলিভারিতে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটরক্ষক নুরুল সোহানের হাতে। মুশফিক ৩৪ বলে ৪১ রান করে ফিরে গেলে পরাজয়ের শঙ্কা ঘিরে ধরতে শুরু করে ঢাকাকে। তবু আশার প্রতীক হয়ে ছিলেন সাব্বির।

মুশফিক ফিরে যাওয়ার সময় ঢাকার সমীকরণ ছিলো ১৭ বলে ৩৬ রান। যা করতে উইকেটে ছিলেন দুর্দান্ত বোলিং করা মুক্তার আলি ও সাব্বির। মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে সাব্বিরের পরিচিত থাকলেও ঝড়টা তোলের মুক্তারই। শেষ দুই ওভারে বাকি ছিলো ৩০ রান। ফরহাদ রেজার করা ১৯তম ওভারে তিন ছক্কা হাঁকান মুক্তার, সমীকরণ নিয়ে আসেন নিজেদের পক্ষে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাকি থাকে ৯ রান।

রাজশাহীর পক্ষে শেষ ওভারে ৯ রান ঠেকানোর দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাট হাতে ম্যাচের একমাত্র হাফসেঞ্চুরিয়ান মেহেদি হাসানকে। শেষ ওভারের প্রথম তিন বল ডট দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন মেহেদি। তবে চতুর্থ বলে চার মেরে দেন মুক্তার। সমীকরণ যখন ২ বলে ৫ রান, তখন আবার পঞ্চম বলটি হয় নো। বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে রিপ্লে দেখে সেটিকে নো বল কল করেন থার্ড আম্পায়ার।

ফলে সমীকরণ নেমে আসে ২ বলে ৪ রানে। কিন্তু এটি নিতে পারেননি আগের ওভারে তিন ছক্কা হাঁকানো মুক্তার। পঞ্চম বল ডট খেলার পর শেষ বলে ১ রান নেন তিনি। জাদুকরী শেষ ওভারে দলকে ২ রানে জেতার মেহেদি। নিজের ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ২২ রান খরচ করেন তিনি, যেখানে ছিলো ১৫টি ডট বল ও ইয়াসির আলির উইকেট।

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মাহাদি হাসান, নুরুল হাসান সোহান, ফরহাদ রেজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, আরাফাত সানি, এবাদত হোসেন, ফজলে রাব্বি, রনি তালুকদার, আনিসুল ইমন, রেজাউর রহমান, জাকের আলী অনিক, রকিবুল হাসান (সিনিয়র), মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ ও সুনাজমুল ইসলাম।

বেক্সিমকো ঢাকা : মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, তানজিদ হাসান তামিম, নাসুম আহমেদ, নাইম শেখ, নাইম হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, আকবর আলী, ইয়াছির আলী রাব্বি, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান রানা, মুক্তার আলী, শফিকুল ইসলাম, আবু হায়দার রনি, পিনাক ঘোষ ও রবিউল ইসলাম রবি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //