প্রতিভাকে কখনো সামাজিক অবস্থান ও আর্থিক অবস্থা দিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি দরিদ্র কুটির থেকে জন্ম নিয়েছেন।
এ রকমই একজন হলেন ভারতের ক্রিকেটার কামরান খান। কারণ কামরানকে আবিষ্কার করেছিলেন আর এক প্রতিভাবান রাজস্থান রয়্যালসের মূল প্রশিক্ষক ড্যারেন বেরি। তিনি আইপিএলের সুবাদে নিজের গ্রামে হয়ে গিয়েছিলেন নায়ক।
তার জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশের অখ্যাত মউ জেলার নাড়ওয়া সরাই গ্রামে। তার বাবা ছিলেন কাঠুরে। কখনো কখনো ট্যাক্সিও চালাতেন। মা বিড়ি বাঁধতেন। ছোটখাটো এক টি-২০ প্রতিযোগিতায় তাকে দেখেছিলেন ড্যারেন বেরি। তার সুবাদেই কামরান ডাক পেয়েছিলেন ট্রায়ালে যোগ দেয়ার।
একটি মাত্র পরিচ্ছন্ন সাদা পোশাক সম্বল ছিল কামরানের। সেটা পড়েই ট্রায়ালের পথে রওনা দেন; কিন্তু রাতে কোনো আবাসিক হোটেলে থাকার টাকা ছিল না। তাই প্ল্যাটফর্মে টিকিট কিনে রাত কাটিয়েছিলেন স্টেশনে। ট্রায়ালে তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের তৎকালীন অধিনায়ক শেন ওয়ার্ন। এখান থেকেই কামরানের ক্রিকেট দুনিয়ায় পদার্পণ।
২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত আইপিএলের দ্বিতীয় মৌসুমে ছোটখাটো চেহারার কামরানকে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করতে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ওয়ার্ন। সে বছর রাজস্থান রয়্যালসে যোগ দেন তিনি।
এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে প্রথম সুপারওভারে বল করেছিলেন কামরান। রাজস্থান রয়্যালস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ টাই করিয়ে সুপারওভার অবধি নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নিউল্যান্ডসের ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া কলকাতা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে।
সেদিনের ১৮ বছরের তরুণ কামরানের বয়স এখন ২৯। এখনো তার জীবনের সেরা মুহূর্ত সেই আইপিএল ম্যাচের সুপারওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ৩ রানে হারিয়ে রাজস্থানকে জয় এনে দেয়া। শেন ওয়ার্ন এখনো তার কাছে রোল মডেল। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে আইপিএলের দুটি মৌসুম খেলেছেন তিনি।
আইপিএলে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দু’সপ্তাহের জন্য তাকে রিহ্যাবে পাঠানো হয়। ফিরে আসার পরে তার বোলিং অ্যাকশন পাল্টে যায়। সেইসাথে হারিয়ে ফেলেন নিজের পুরনো ফর্মও।
২০১১ সালে কামরান যোগ দেন পুনে ওয়ারিয়র্সে। সেটি তার ক্যারিয়ারের সব থেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি। পুনের হয়ে সেই মৌসুমে একটি মাত্র ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে সেই ম্যাচে পুনের কামরান দুই ওভারে ৩৭ রান দিয়ে দুরমুশ হয়েছিলেন। বাকি টুর্নামেন্টে চোটের কারণে পুনের রিজার্ভ বেঞ্চেই দিন কেটেছিল তার।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেই আইপিএলে অভিষেক হয়েছিল তার। ২০১১ সালের পরে তিনি আর ডাক পাননি আইপিএলে। তার দু’বছর পরে শ্রীলঙ্কার কোল্টস ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দুনিয়ায় পা রাখেন।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে মুম্বাই থেকে আপাতত নিজের গ্রামে ফিরেছেন কামরান। সেখানেই চলছে অনুশীলন। আবার ক্রিকেটে ফিরতে বদ্ধপরিকর এই বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh