রাজা-রানির ২২ গজের রূপকথা

স্বামী-স্ত্রী নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন, এটা বেশ স্বাভাবিক ঘটনাই। এই তো গত বছর অর্থনীতিতে মিখেল ক্রেমারের সঙ্গে নোবেল পদক পান অভিজিৎ ব্যানার্জি আর তার স্ত্রী এস্থার ডুফলো। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে? ভাবুন তো একই ছাদের নিচে থাকা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। শুধু তাই নয়, দু’জনই একটি করে আসরে সেরা ক্রিকেটারও হয়েছেন!

সুখী এই দম্পতির নাম মিচেল স্টার্ক ও অ্যালিসা হিলি। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের হয়ে দু’জনই খেলছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। মিচেল স্টার্ক যেমন অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ দলের হয়ে দুরন্ত গতিতে বল করে প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেন তেমনি অ্যালিসা হিলি অস্ট্রেলিয়া নারী দলের উইকেটরক্ষক এবং নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।

দু’জনই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছেন। মিচেল স্টার্ক ২০১৫ বিশ্বকাপে (ওয়ানডে) সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন। দুরন্ত গতিতে বল করে এই বাঁহাতি পেসার নিয়েছিলেন ২২টি উইকেট।

এদিকে অ্যালিসা হিলি ২০১৮ সালে নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২২৫ রান করে হয়েছিলেন আসর সেরা।

রূপকথার মতো এই দম্পতির জীবন। দু’জনের বয়স যখন ৯ বছর তখন তারা ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। সেই বাল্যবন্ধুত্ব এক সময় রূপ নেয় প্রেমে। আর সেই প্রেম থেকে বিয়ে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন স্টার্ক ও হিলি। এর পর যেন আরো জ্বলে ওঠা!

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ না জিতলেও ২০১৯ বিশ্বকাপে দাপট দেখিয়েছেন স্টার্ক। আর চলতি বছর মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলেছেন হিলি। পাঁচবারের মতো ওই ট্রফিটা নিজেদের করে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা।

অ্যালিসা হিলির নামটা শুনলেই নব্বইয়ের দশক থেকে যারা ক্রিকেট দেখেন তাঁরা কাউকে খুঁজবেন। তিনি ইয়ান হিলি। দীর্ঘকাল অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন অস্ট্রেলিয়া দুই ফরম্যাটের জন্য আলাদা দল করে তখন হিলি কেবল টেস্টই খেলেন। অ্যালিসা হিলি হচ্ছে সেই ইয়ান হিলির ভাতিজি। অ্যালিসা হিলির বাবাও ছিলেন ক্রিকেটার।


অ্যালিসা হিলির রক্তেই ক্রিকেট! অন্য কিশোরীরা যখন অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত তখন অ্যালিসা ব্যস্ত ব্যাট, বল আর উইকেট রক্ষকের গ্লাভস নিয়ে। অ্যালিসার বয়স যখন ৯ তখন থেকেই তিনি খেলতে শুরু করেন।

অনুশীলন করতে থাকেন সিডনির নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট জুনিয়র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে। সেখানে এসেই কিশোর স্টার্কের সঙ্গে পরিচয়। সমবয়সী হওয়ার কারণে বোঝাপড়াটাও হয়ে গেল বেশ। এক বছর পর দেখা গেল দু’জনই উইকেটরক্ষক হিসেবে নিজেদের অবস্থান গড়ে নিয়েছেন। আর ওই দলটার কোচ ছিলেন স্টার্কের বাবা পল।

স্টার্ক সেই সময়টার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সোনালি চুলের উইকেটরক্ষকটাকে আমার ভালো লাগতো। মেয়েটি বেশ মেধাবী। আর ছেলেদের খেলারও বেশ সামর্থ্য রাখে।’ কিন্তু ওই বয়সে সেটা বন্ধুত্ব পর্যন্তই ছিলো।

২০১০ এ এসে স্টার্ক আর হিলি দু’জনই টের পান সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছুর দিকে গড়াচ্ছে। ওই বছর অস্ট্রেলিয়া লম্বা একটা সফরে ভারত যায়। ওই দলে ছিলেন মিচেল স্টার্ক। সফরের আগে হিলির সঙ্গে সময়টা কাটে স্টার্কের।

আর সেই সময়েই নিজেরা বুঝতে পারেন বন্ধুত্বেও সম্পর্কটা গড়িয়েছে প্রেমে! হিলি বলেন, ‘সেবার (২০১০ সালে) অস্ট্রেলিয়ার ভারত সফরের আগে দুই সপ্তাহের মতো আমরা সময় কাটাই। ও (স্টার্ক) চলে
যাওয়ার ঠিক আগে আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি কী হচ্ছে, আর এই সম্পর্কটারই বা কী হচ্ছে? এতটা সময় ধরে বন্ধুত্ব, তারপর হয়ে গেল প্রেম।’ ২০১৬ সালের এপ্রিলে বিয়ে করেন স্টার্ক আর হিলি।

হিলি বলেন, ‘আমরা দু’জনই ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি। আমাদের বাচ্চা-কাচ্চারা আমাদের সাফল্যের গল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করবে এক সময়, এটা ভাবতে দারুণ লাগে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //