পুড়ে গেছে কাঁথা, শীতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বস্তিবাসীদের

কনকনে কুয়াশার রাতে যে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলেন সেটিও পুড়ে গেছে। শীতের কাপড় কিংবা অপরিহার্য যা কিছু ছিল-সব এখন ছাই। এ কথাই ভিক্ষুক খোরশেদ আলম বলতে পারছিলেন না। অসহায় ভঙ্গির কান্নায় অঝোরে বের হওয়া চোখের জল জানাচ্ছিল সর্বস্ব হারানোর বার্তা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার মোল্লাবাড়ি বস্তির প্রায় ৩০০ ঘড় পুড়ে গেছে আগুনে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আজ শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের ঘিরে অনেক মানুষের ভিড়। তখন কান্নজড়িত কণ্ঠে খোরশেদ পুলিশের সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেন। পরে তিনি তার নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে সাহায্য চান। কিন্তু তার কথায় কান দেননি কেউ।

স্ত্রী ফরিদাকে নিয়ে লাঠি ভর করে দাড়িয়ে কাঁদছিলেন খোরশেদ। তখন কথা হয় তার সঙ্গে। ভারাক্রান্ত কন্ঠে জবাব দিচ্ছিলেন তিনি। খোরশেদ  বলেন, ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্য ঢাকা এসেছিলাম। আজ আগুনে সব পুড়ে আমি মিসকিন হয়ে গেছি। আমার এই লাঠিটা ছাড়া আর কিছুই নাই এখন।

খোরশেদ জানান, তার স্ত্রী ফরিদা প্রতিবন্ধী। প্রায় ছয় বছর আগে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী থেকে ঢাকা এসেছিলেন। এরপর রাস্তার পাশে ভ্যানে করে শরবত বিক্রি করতেন। এখন থেকে তার ভালো আয় হতো, এই টাকায় তার দিন ভালোই যাচ্ছিল। কিন্ত হঠাৎ একদিন ট্রেনের নিচে পড়ে একটি পা হারিয়ে যায়। তিন বছর আগে এ ঘটনার পর কোনে কাজ না পেয়ে তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন। অল্প টাকায় কোনো মতে খেয়ে দিন পার করতেন।

৬২ বছর বয়সী এই ভিক্ষুক বলেন, টানাটানি করে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতাম এখানে (মোল্লাবাড়ি বস্তি)। গতকাল রাতে হঠাৎ টিনে ঢিল ছোড়ার শব্দ পেয়ে জেগে দেখি ঘরে আগুন লেগেছে। লাটিটা হাতে নিয়ে বের হয়ে এসেছি। তবে প্রয়োজনীয় জিনিস, জমানো কিছু টাকা নিতে পারিনি। এখন আমরা সব হারিয়ে একেবারে মিসকিন হয়ে গেলাম। এই বয়সে আমাদের দেখার মতোও কেউ নাই।

আমরা কোথায় ঘুমাবো, কী খাবে? পাশ থেকে স্ত্রীর এমন প্রশ্নে আরও জোরে কান্না করছিলেন ভিক্ষুক খোরশেদ আলম।

খোরশেদের মতো অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস ছিল কারওয়ান বাজারে রেললাইন ঘেঁষা বস্তিতে। গতকাল শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সামনের এক অংশ বাদে বস্তির সব ঘর পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। আধপোড়া টিন ও লোহার তৈরি জিনিসপত্র কুড়াচ্ছে মানুষজন। পুরো বস্তি পুড়ে এগুলোই এখন অবশিষ্ট রয়েছে। পাশে এক পিকআপে তুলছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, পুড়ে যাওয়া টিন, লোহা ও এ জাতীয় জিনিস প্রতি কেজি ৫০ টাকায় কিনে নিচ্ছেন তারা। এক পিকআপে প্রায় চারশ’ কেজি নেয়া যাচ্ছে। সকাল থেকে এমন আরো প্রায় ৬ পিকআপে ভরে নেয়া হয়েছে। যদিও বস্তির লোকজন বলছে এসব টাকা না দিয়েই যে যার মতো করে নিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //