ইউনিসেফ আয়োজিত শিশু সম্মেলন

জলবায়ু সংকটে শিশুদের ভবিষ্যত নিশ্চিতের দাবি

এবছর বিশ্ব শিশু দিবস সপ্তাহে বাংলাদেশের শিশুরা একটি পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিতে জাতীয় নেতাদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেn। আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে  জাতিসংঘের (ইউএন) বার্ষিক জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ‘কপ২৮’। আর এর ঠিক প্রারম্ভে শিশুদের জন্য জলবায়ু শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবায় বিনিয়োগের গুরুত্বারোপের পাশপাশি শিশুদের জীবনকে প্রভাবিত করে  এমন জলবায়ু সংকটের সমাধান খুঁজতে তাদের সম্পৃক্ত করতে নীতিনির্ধারকদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতেও আহ্বান জানায় শিশুরা। 

ইউনিসেফ আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায়  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি। এছাড়াও ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট ছাড়াও সারাদেশ হতে আগত শিশুরা অংশ নেন এই  অনুষ্ঠানে।  

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি বলেন, “জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশের শিশুরাই আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান অংশীজন। শুধু শিশু-কেন্দ্রিক জলবায়ু নীতিমালার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা বললেই হবে না, সক্রিয়ভাবে তা বাস্তবায়নও করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ু সংকট এবং একটি নিরাপদ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বিকশিত হওয়ার অধিকার লঙ্ঘনের দ্বৈত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন, যার স্বীকৃতি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

শিশু ও তরুণরা যেন তাদের ভবিষ্যৎ গঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে  অংশগ্রহণ করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করতেও জোরালো দাবি জানান ইয়েট। 

এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম শিশুদের জলবায়ু সম্মেলন বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি শিশুকে সম্পৃক্ত করা গিয়েছিল। সেসময় তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি জলবায়ু ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয় যেটির ধারাবাহিকতায় শিশুদের প্রতিনিধিত্বকারী দলের পক্ষ হতে ইউনিসেফ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার কার্যালয়ে শিশুদের জলবায়ু ঘোষণাপত্রের একটি সংশোধিত সংস্করণ পাঠায়। 

এ সময় ইয়ুথ অ্যাডভোকেট, জলবায়ুকর্মী, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও শিশু সাংবাদিকসহ যৌথভাবে শিশুরা জলবায়ু ঘোষণার অগ্রগতির বিষয়টিও মূল্যায়ন করেন। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি রূপরেখাও তৈরি করেছে। 

আলোচনা সভায় শিশুদের পক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে নায়ের হক বলেন, “সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কবলে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছি এবং এর মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয় আমাদের শিশুদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় শিশুদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।”

নায়ের বলেন, ‘কপ২৮’-এর আগে তারা জোর দিয়ে বলে যে, সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করে ‘কপ২৮’-এ প্রতিনিধিত্বকারী দেশের প্রতিনিধিদলের উচিত একটি পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন মারাত্মকভাবে জলবায়ু ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০ লাখ শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম ও ১ কোটি ২০ লাখ শিশু বন্যাপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি বাস করেন। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী ৪৫ লাখ শিশু তীব্র ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে সবসময় ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। 

উল্লেখ্য, ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু, সংসদ সদস্য ও নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের আয়োজন করে থাকে যাতে শিশুরা তাদের বিষয়গুলো সম্পর্কে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //