আপিলে ঝুলছে সবুজসংঘ মাঠের ভাগ্য

১৪ বছরেও দখলমুক্ত হয়নি খিলগাঁও মালিবাগের চৌধুরীপাড়া সবুজসংঘ মাঠ। আবুল হোটেলের উল্টো পাশে গণপূর্তের জমির এ মাঠে বর্তমানে গড়ে উঠেছে আনসার-ভিডিপির গ্যারেজ। 

জানা যায়, মাঠটি ১৯৮৭ সালে আনসার-ভিডিপি কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে সেই ইজারা বাতিল করা হলে সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরই হাইকোর্টে রিট করে আনসার কর্তৃপক্ষ। তবে  ২০১৮ সালে ওই রিট আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়।

আনসার ভিডিপির ইজারা বাতিলের চার বছর পর স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ‘সবুজমতি ট্রাস্টের’নামে ইজারা নেয় মাঠটি। পরে এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০০৪ সালে সেই ইজারাও বাতিল করা হয়।

নব্বইয়ের দশকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই বিঘা জমি সবুজসংঘ মাঠ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট মাঠটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এক বছরের মধ্যে আধুনিক শিশুপার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আনসার-ভিডিপির আবেদনের কারণে সেই রায় আপিল বিভাগে আটকে আছে। ফলে আজও সেই মাঠ দখলমুক্ত হয়নি।

গণপূর্তের জমির এ মাঠে বর্তমানে গড়ে উঠেছে আনসার-ভিডিপির গ্যারেজ। ছবি : সাম্প্রতিক দেশকাল

ওই সময়ের ঘটনা জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা কামাল আহমেদ দুলু বলেন, “এই মাঠটাকে আমরা পচার মাঠ নামে চিনতাম। বিএনপির সময় এই মাঠটা শিশু পার্ক হয়। তখন থেকে এটি ‘সবুজ সংঘ মাঠ’ নামে পরিচিত। এরপর আমরা দেখি রেশনিংয়ের নাম করে এই মাঠে ক্যাম্প করে। হঠাৎ তারা পুরো মাঠ আটকায় দেয়। তারপর আমরা যখন মাঠ উদ্ধারের জন্য আন্দোলন শুরু করি সে সময় আমাদের উপর হামলা চালায়। অনেকের নামে মামলা পর্যন্ত করা হয়।”

মাঠ দখল মুক্ত করার আন্দোলন করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের হামলা-মামলার শিকার হন ওই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান জনি বলেন, ২০০৭ সালের শেষের দিকে আনসাররা এসেই এই মাঠে একটা ক্যাম্প করে। সেই ক্যাম্পে তারা অসহায়-দুস্থদের বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ দেয়ার কাজ করে। সেই সময়ও আমরা মাঠের যেই অংশ ফাঁকা ছিলো সেখানে খেলাধুলা করতাম। হঠাৎ একদিন সকালে দেখি পুরো মাঠ টিন দিয়ে ঘেরাও করা। ভিতরে ঢুকার কোন রাস্তা নেই।”

১৪ বছরেও দখলমুক্ত হয়নি খিলগাঁও মালিবাগের চৌধুরীপাড়া সবুজসংঘ মাঠ।

মাঠ উন্মুক্তের দাবি করায় ২০০৭ সালের এক মামলার ১ নম্বর আসামি স্থানীয় মাসুম আলী মল্লিক বলেন, ‘মাঠ রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে ছয় দিন জেল খেটেছি। প্রায় দুই বছর মামলার ঘানি টেনেছি। এখন আদালত মাঠ দখলমুক্ত করার রায় দিলেও, তা আপিল বিভাগে আটকে আছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ওখানে আনসার-ভিডিপি সাবস্টেশন করে ফেলেছে। এর বিকল্প হিসেবে হাজিপাড়ায় খেলার মাঠ ও ঈদগাহ করে দেওয়া হবে। এছাড়া আপিল বিভাগ যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাও কার্যকর করা হবে।’

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ওই এলাকায় একটা মাত্র খেলার মাঠ, এটা আনসার কেমন করে নিয়ে নেয়। আনসারের এ বিষয়ে মামলা পরিচালনা করাও উচিত নয়। উন্মুক্ত স্থানের যে আইন আছে ২০০০ সালের, সে অনুসারে এই মাঠ অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //