প্লেনের টিকিট বিক্রির নামে মহাপ্রতারণা

বিদেশগামী যাত্রীদের টার্গেট করে এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেল কনসালটেন্সি নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। পরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে চক্রটি।

যাত্রার কিছু দিন আগে যাত্রীদের নামে বিক্রি করা টিকিট রিফান্ড করে অর্থ হাতিয়ে উধাও হয়ে যেত তারা। যাত্রীরা নির্ধারিত তারিখে বিমানবন্দরে গিয়ে জানতেন তাদের টিকিট বাতিল হয়েছে। 

চক্রটি ২০১৫ সাল থেকে ওমরা হজ ও হজকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করত। এছাড়া বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা ও পড়তে যাওয়াদের সাথে একইভাবে প্রতারণা করত তারা। 

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এয়ারলাইন্স টিকিট নিয়ে প্রতারণা করা চক্রের মূলহোতা মাহবুবুর উর রশিদকে (৫১) বুধবার (১১ মে) রাজধানীর কলাবাগানের গ্রিনরোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ৮১টি ভুয়া টিকিট, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন, দুটি কম্পিউটার, একটি কালো রঙের জিপ, ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও একটি ডাচ-বাংলা এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ মে) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২৬ মার্চ সাইদুর রহমানের নামে একজন ভুক্তভোগীর সাথে প্রতারক মাহবুব রশিদের পরিচয় হলে সে এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেল কনসালটেন্সি নামে প্রতিষ্ঠানের সিইও বলে দাবি করে। একইসাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টিকিট ক্রয় করে যাত্রী বিদেশ পাঠায় বলে সাইদুরকে জানায়। তখন সাইদুর তার পরিচিত পাঁচজনের মাস্কট, রিয়াদ এবং টরেন্টোর বিমানের টিকেট লাগবে বলে জানায়। পাঁচজনের টিকিট বাবদ প্রতারক মাহবুবকে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করলেও প্রথমত মাস্কট এবং রিয়াদের দুটি টিকিট প্রদান করে। 

কিন্তু রিয়াদের যাত্রী গত ২৮ মার্চ বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন তার টিকিট বাতিল হয়ে গেছে। টিকিটিং এজেন্সি টাকা রিফান্ড করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানতে পারেন সাইদুর। আসামির সাথে যোগাযোগ করলে পরবর্তীতে আবার দুইটি টিকিট ইস্যু করে দিলেও ফ্লাইটের দিনে সাইদুর জানতে পারেন এ টিকিট দুটিও রিফান্ডেড। পরবর্তীতে টরন্টোর টিকিট ইস্যু না করেই মাহবুবুর উর রশিদ অফিস গুটিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এ রকম আরো কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ডিবি গুলশান তদন্ত শুরু করে।

তিনি বলেন, প্রতারক মাহবুবুর রশিদ বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে বিভিন্ন দেশে গমনাগমন, ওমরা হজ পালন, সিঙ্গেল টিকিট, আপ-ডাউন টিকিট, পরিবারের সদস্যদের জন্য বিমানের টিকিট কাটার বিজ্ঞাপন দিতেন। কোনো বিদেশগামী যাত্রীর টিকিটের প্রয়োজন হলে বা কোনো কাস্টমার রাজি থাকলে তার কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবি নিয়ে নিতেন। পরবর্তীতে প্রতারক মাহবুবুর রশিদ দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিক সাদের মাধ্যমে দুবাই থেকে ও পাকিস্তানের করাচির আল-গাফফার ট্রাভেলস, আনোয়ার সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড, জে এ এস ট্রাভেলস, ভাওয়ালপুর এলাকার ফ্লাই-লিংক ট্রাভেলস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে মাহবুবকে হোয়াটসঅ্যাপে এবং ই-মেইলে পাঠান। কখনো কখনো বুকিং কনফার্ম করে এবং যাত্রীদের টিকিটের আইটেনারি প্রদান করে (যেখানে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর যাত্রা বিবরণী ইত্যাদি থাকে) টাকা নিয়ে নিতেন।

ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটির প্রধান মাহবুব উর রশিদের সহযোগী জাহাঙ্গীর ক্লায়েন্ট সংগ্রহ, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা ও বিভিন্ন ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সির সাথে সমন্বয়, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ গ্রহণ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টিকিট বিক্রি করে প্রতারণাসহ নানা প্রতারণার ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা রাজধানীর ভাটারা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও কলাবাগান নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন থানায় ৬টি মামলা করেছেন। পুরনো আরো ৩টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিবি প্রধান আরো বলেন, প্রতারক মাহবুবুর রশিদ ২০১৫ সালে কানাডায় লোক পাঠানোর কথা বলে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করার জন্য মোহাম্মদপুর এবং ধানমন্ডি থানায় দুটি মানবপাচার মামলার আসামি। এ সময় তার প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল প্ল্যানেট ওভারসিজ। একসময় তার মাথায় বিমানের টিকিট প্রতারণার কৌশল আসে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতারণা কাজের জন্য এখন পর্যন্ত একাধিকবার অফিস পরিবর্তন করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায়, ২০১৮ সালে কারওয়ান বাজারে, ২০২১ সালে এলিফ্যান্ট রোডে এবং সর্বশেষ বসুন্ধরা এলাকায় তার অফিস স্থাপন করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //