তেঁতুলতলা মাঠ সংরক্ষণ, মা-ছেলেকে হয়রানির তদন্ত দাবি

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন নির্মাণ না করে খেলার মাঠ রাখার দাবি জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।

এছাড়া এলাকাবাসীকে হয়রানি না করা, মা ও ছেলেকে থানায় আটকে রাখার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানান তারা।

তেঁতুলতলা মাঠে থানাভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, ‘কোনো ১৩ ঘণ্টার বেশি আটকে রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন।’ 

আজ সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি হলে তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ ইস্যুতে ‘এলাকাবাসীকে হয়রানি ও আটকের তীব্র প্রতিবাদে’ ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো- এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন, আমরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সোসাইটিসহ অন্যান্যরা।সংবাদ সম্মেলন তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৭নং ওয়ার্ডে কলাবাগানের একটি মাঠ তেঁতুলতলা। প্রায় ৫০ বছর ধরে উন্মুক্ত এই মাঠটি স্থানীয় লক্ষাধিক বাসিন্দা ঈদগাহ হিসেবে, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে, মৃতদেহ গোসল করানোর কাজে এবং খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, গতকাল দিনভর প্রতিবাদের মুখে মাঝরাতে থানা কর্তৃপক্ষ সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও মাঠ রক্ষায় তিনি আর আন্দোলন করবেন না বলে বেআইনিভাবে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মাঠে থানা বা অন্য কোনো স্থাপনা হবে না, মাঠে শিশুরা খেলবে, কলাবাগান থানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে অনতিবিলম্বে সেই প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে হবে। একইসাথে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেসহ পরিবারের অন্য সদস্যের ও এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মাঠ সংরক্ষণে সব কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্যে প্রস্তুত।

বাপার সহ-সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। শুধু তাই নয় ৭১ এ ঢাকা শহরে প্রথম শহীদ এই পুলিশরাই। আমি তো মনে করি পুলিশেরই সবার আগে আন্দোলনে নামার কথা। তবে এখানে কোনো অবস্থায় পুলিশের থানা হতে পারে না, কারণ এটি জনগণের খেলার মাঠ। যদি তারা বন্ধু হয় তবে প্রথম দায়িত্ব তাদেরই ছিল। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম, যে পুলিশ স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছিলো তারা বন্ধত্বের পরিবর্তে বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট করার প্রচেষ্টায় আছে।

বেলার নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, আমরা কেউই নিরাপদ বোধ করি না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে...পকেটের মধ্যে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়া, যখন-তখন তুলে নিয়ে যাওয়া। এসব কাজ যে চালু আছে- এই ঘটনাকে তার একটা উদাহরণ হিসেবে ধরে আমরা আবার সোচ্চার হলাম।

তিনি বলেন, আমরা আরেকটা নতুন ট্রেন্ড দেখলাম যে, ধরে আনা হলো কিন্তু কেউ আমাদের মুখোমুখি হচ্ছে না। একজন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থানায় নেই। কেনো তিনি থানায় থাকবেন না। আমরা তাকে ফোন করছি তিনি আমাদের ফোনও ধরছেন না। একজন না একজনকে থাকতে হবে যে জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। যখন আমরা প্রথম থানায় ঢুকলাম আমাদেরকে থানায় ঢুকতে পর্যন্ত দেয় নেই। থানার গেট আটকে দেয়া যায় তাহলে আমরা কোথায় যাবো। থানাতে মানুষের কথা বলাকে বাধা দেয়া যায়। এটাতো নাগরিক কাজে বাধা দেয়া। সারাদিনে আমাদেরকে কেউ কোন উত্তর দেয়নি। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে কেন আটক করা হলো। এর কিন্তু কোনো উত্তরই আমরা পেলাম না। আমরা কি আসলেই কেউ নিরাপদ। এখন এদের অভ্যাস হয়ে গেছে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়া, যখন তখন তুলে নিয়ে যাওয়া। আমরা খেলার মাঠগুলোর ব্যাপারে আগেও সোচ্চার ছিলাম। এই ঘটনার পর আরো বেশি সোচ্চার হলাম।

স্থানীয় উপস্থিত পুলিশদের ভাষ্যমতে, মাঠটি ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক থানা নির্মাণ করার জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। 

ইতোমধ্যে স্থানটি জনস্বার্থে উন্মুক্ত রাখার দাবিতে ১৭ নং ওয়ার্ডের অধিবাসী ও মাঠ ব্যবহারকারী শিশুরা প্রধানমন্ত্রী ও মেয়র বরাবর আবেদন করেছেন। তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৬ মার্চ ও ৬ এপ্রিল দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা সরকারের বরাবরে আবেদন প্রেরণ করেছেন।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে উপ‌স্থিত ছি‌লেন- নি‌জেরা ক‌‌রির সভাপতি খু‌শি ক‌বিরসহ টিআইবি, উ‌দীচী শিল্পী গোষ্ঠী, নারীপক্ষসহ বি‌ভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। কলাবাগা‌নের এই মাঠ রক্ষায় আজ বিকেল ৩টায় তেঁতুলতলা মা‌ঠের সাম‌নে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমা‌বেশ কর‌া হবে ব‌লেও জানান বক্তারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //